পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৮১

পিতৃকুল—তাহা অস্বীকার করিয়া তিনি তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছেন। নিরাশ্রম নিরবলম্ব হইয়া, তিনি একমাত্র ভগবানকে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছেন।

 এ যেন পুষ্পতরু, মাটীকেই একমাত্র আশ্রয় মনে করিয়া, বহু শিকড় দ্বারা তাহাকে আকঁড়াইয়া ধরিয়াছে। তাহার উর্দ্ধে নীলাকাশ, শত শত পাখী কলবর করিয়া তথায় উড়িয়া যাইতেছে, কিন্তু তরু উড়িতে চাহিয়া জল ভিক্ষা করে না, তাহার দশদিকে কত পশু, জীব, মানব নান কাম্যবস্তুর লোভে ছুটাছুটি করিতেছে,—সেই দশ দিকের দশপথ সে দেখে না। সে যাহা আরাধনা করে, তাহা সমস্তই মাতৃক্রোড়ে বসিয়া, মাতার নিকট। এইভাবে সকল দিক্ হইতে মন সরাইয়া আনিয়া তাঁহাকে সমর্পণ করিলে এবং যোগীর মত আত্মস্থ, ধ্যানস্থ হইয়া তপস্য করিতে পারিলে, সর্ব্বসিদ্ধি-লাভ হয়। কাম্যের অধিক ফল অযাচিতভাবে আসিয়া হাতে পড়ে। যে মাটীর আপাত দৃষ্টিতে কোন বর্ণসম্পদই নাই—যাহা ঘ্রাণহীন ও নীরস, সেই মাটী হইতে বর্ণের সম্রাজ্ঞী পদ্মিনী ফুটিয়া উঠে কিরূপে? কোথা হইতে গোলাপ, মল্লিকা, বেলা, কুন্দ এত শোভা এত গন্ধ পায়? কোথা হইতে ফজলী ও নেংড়া আমের গাছ এবং খর্জ্জর তরু ও ইক্ষুলতা অফুরন্ত অমৃতরসে সমৃদ্ধ হয়? কোথা হইতে চন্দন তাহার সুবাস সংগ্রহ করে?—এই আত্মস্থ তপস্যার বলে। উহারা সংসারের নানাদিকের নানা প্রলোবনে আকৃষ্ট হয় নাই; উহারা বুঝিয়াছে জীব-মানবের গতিশীলতা ভুল পথে লইয়া যায়। তাহারা বুঝিয়াছে, যিনি চারিদিকে এত সম্পদের সৃষ্টি করিয়া বিশ্ব-চরাচরে ঝলমল করিয়া প্রকাশ পাইয়াছেন, তিনি এই মূহূর্ত্তে এইখানেই আছেন। যিনি জীবের নিকট হইতেও নিকট, তাঁহাকে খুঁজিতে অন্যত্র যাইয়া লাভ নাই—বরং তাহাতে লোকসান আছে।