পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৮৭

করাও কষ্টসাধ্য নহে। বহু সংগ্রহ গ্রন্থে—বিশেষ ময়নাডলার মিত্র-ঠাকুরদের সংগৃহীত কোন কোন খাতায় এই গানটির ভণিতায় জ্ঞানদাসের নাম পাওয়া যায়। প্রধানতম পুঁথিগুলিতে এই প্রকৃতির বর্ণনার অংশটুকু বাদে বাকী চণ্ডীদাসের ভণিতায় দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং স্বীকার করিতে হইবে, নিরাভরণা সুন্দরীর গলায় কেহ মতির মালা পরাইয়া দিলে যেরূপ হয়, জ্ঞানদাস সেইভাবে চণ্ডীদাসের পদটির অঙ্গসৌষ্ঠব সাধন করিয়াছেন।

 এই যোজনায় মেঘাগমে বিরহের চিত্র অতি স্পষ্ট হইয়াছে রাধিকার ঘুমস্ত অবস্থায় দৃশ্যপটে কোন রূপের বর্ণনা সঙ্গত বা শোভন হইত না। এজন্য কবি কেবল শ্রুতির দিকে লক্ষ্য রাখিয়া এরূপ বর্ণনা দিয়াছেন—যাহাতে ঘুমের আবেশ বৃদ্ধি হয়। কেবল সুরই তাঁহার লক্ষ্য। কর্ণ যদিও কতকটা নিষ্ক্রিয়, তথাপি যেটুক সজাগ, তাহাতে সুরের মোহ নিদ্রিতের মনে পৌঁছিতে পারে। শিশুর ঘুমন্ত অবস্থায়ও কিছুকাল জননী ‍ঘুমপাড়ানিয়া গান আবৃত্তি করিতে থাকেন, চক্ষু যখন একেবারে মুদিত, তখনও ঘুমের অবস্থায় শ্রুতি কিছুকাল সজাগ থাকে। “রজনী শাওণ (শ্রাবণ), ঘনঘন (বারংবার) দেয়া (মেঘ) গরজন”—এখানে মেঘের সম্পদ্‌ বা আকৃতি সম্বন্ধে একটি অক্ষরও নাই,—মেঘের “রিমিঝিমি” শব্দে ঘুমের আবেশ বৃদ্ধি করে। বৃষ্টি-বিন্দুর রূপ হীরার মত কি মুক্তার মত, কবি তাহা বলেন নাই; কারণ শব্দই কবির লক্ষ্য। “ঝিঁ ঝিঁ ঝিমকি ঝাঁকে—ডাহকী সে গরজে” প্রভৃতিও শব্দমন্ত্র; ইহা দিয়া কবি আমাদিগকে এক ঘুমন্ত পুরীতে লইয়া গিয়াছেন। সেই মোহনিদ্রাতুর রজনীর আবেশ-বর্দ্ধক বিচিত্র সুরের রাজ্যে কৃষ্ণের স্বপ্ন-শ্রুত মধুরাক্ষরা বাণী রাধাকে অপর কোন জগতের আকস্মিক প্রিয়-জনের আহবানের মত আবিষ্ট করিয়া ফেলিল। চণ্ডীদাসের কবিতায়