পাতা:পরশুরাম গ্রন্থাবলী ( তৃতীয় খণ্ড ) - রাজশেখর বসু.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

বরনারীবরণ সঙ্কনসংগতির নাম আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন। খবরের কাগজে যাঁদের ওয়াকিফহাল মহল বলা হয় তাঁরা সকলেই একমত যে এর মতন উচদরের অভিমত ক্লাব কলকাতায় আর নেই। নামটি মােহমদেগর থেকে নেওয়া বটে, কিন্তু এখানে এর মানে সাধুসঙ্গ নয়। সজ্জনসংগতি—কিনা শিক্ষিত শৌখীন নরনারীর মিলনস্থান। আপনি যদি আধুনিক শ্রেষ্ঠ লেখক চিত্রকর নটনটী গাইয়ে বাজিয়ে নাচিয়ে দেখতে চান তবে এখানে আসতেই হবে। যদি অলট্রামডান ফ্যাশন আর চালচলন শিখতে চান তবে এই ক্লাব ভিন্ন গত্যন্তর নেই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বাৎসরিক চাঁদা নগদ এক শ টাকা। ক জন তা দিতে পারে ? চাঁদার টাকা যদি বা যোগাড় করলেন তব দরজা খােলা পাবেন না। সঞ্জনসংগতির সদস্যসংখ্যা ধরাবাঁধা আড়াই শ। যদি একটা পদ খালি হয় এবং অন্তত পঞ্চাশ জন সদস্যের সম্মতি আনতে পারেন তবেই আপনার আশা আছে। বি যদি আপনার বরাত ভাল হয় তবে সুপারিশের জোরে ক্লাবের কোনও বিশেষ অধিবেশনে আপনি অতিথি হিসাবে বিনা খরচে নিমন্ত্রণ পেয়ে যেতে পারেন। ক্লাবটি চালাবার ভার যাঁদের উপর তাঁরা পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচিত হন। বর্তমান সভাপতি অনুকল চৌধুরী একজন মনীষী লেখক ও সুবক্তা, বিখ্যাত সিক পত্রিকা প্রগামিনী’র মালিক ও সম্পাদক। এর বয়স এখন পয়ষট্টি, আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের সঙ্গেই মিশতে পারেন সেজন্য সকলেরই ইনি প্রিয়। কর্মাধ্যক্ষ দ, জন, কপােত গুহ আর সােহনলাল সাহ। কপোত গুহ ব্যারিস্টার, বয়স চল্লিশের নীচে, পসার নেই কিন্তু পৈতৃক টাকা দেদার আছে। সােহনলাল ধনী কারবারী যক, বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, খুব শৌখীন, ছাপরার লােক হলেও বাঙালীর সঙ্গেই বেশী মেশেন। ইনি বলেন, বিহার প্রদেশের সমস্তই বাংলার অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকর, নতুবা বিহারী কালচারের উন্নতি হবে না। বিকাল বেলা প্রগামিনী পত্রিকার অফিসে অনকল চৌধুরী, কপোত গুহ আর সােহনলাল সাহ, সঞ্জনসংগতির আগামী অধিবেশন বন্ধে পরামর্শ করছেন। কপােত গহ একট, চঞ্চল হয়ে বলছিলেন, এ রকম করে ক্লব চালানাে যাবে না দাদা। প্রত্যেক বৈঠকে সেই একঘেয়ে প্রােগাম, ভূপালী বােসের গান, লল, চ্যাটার্জীর নাচ, দরদী সেনের ন্যাকা ন্যাকা আবৃত্তি, জগাই বারিকের রাসলীলা ব্যাখ্যা, আর শসার স্যাণ্ডউইচ কেক শিঙাড়া সন্দেশ পেস্তাবাদাম-ভাজা আইসক্রীম চা। অনকল বাবা বললেন, বেশ তাে, কি রকম করতে চাও তাই বল না। সােহনলাল বললেন, গহ সাহেবের মন খারাপ হয়ে গেছে দ দা। সেদিন প্রাচী-প্রতীচী সংঘের জয়ন্তী হয়ে গেল, তারা একটি চমৎকার ট্যাবলাে দেখিয়েছে। ডলি বাগচীর ক্লিওপেট্রা, পবন ঘােষের অ্যান্টনি, আর ইরফান আলীর ঘটোৎকচ দেখে সকলে অবাক হয়ে গেছে। ঘটোৎকচ ক্লিওপেট্রাকে কাঁধে নিয়ে পালাচ্ছে আর অ্যান্টনি ভেউ ভেউ করে কাঁদছে। যারা দেখেছে তারা সবাই ধন্য ধন্য করছে। ১০০