পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার বাহন
১১৭

 আমাদের ভরসা এতই কম যে ইস্কুল কলেজের বাহিরে আমরা যে-সব লোকশিক্ষার আয়োজন করিয়াছি সেখানেও বাংলা ভাষার প্রবেশ নিষেধ। বিজ্ঞানশিক্ষাবিস্তাবের জন্য দেশের লোকের চাঁদায় বহুকাল হইতে সহরে এক বিজ্ঞান সভা খাড়া দাঁড়াইয়া আছে। প্রাচাদেশের কোনো কোনো রাজার মত গৌরবনাশের ভয়ে জনসাধারণের কাছে সে বাহির হইতেই চায় না। বরং অচল হইয়া থাকিবে তবু কিছুতে সে বাংলা বলিবে না। ও যেন বাঙালীর চাঁদা দিয়া বাঁধানো পাকা ভিতের উপর বাঙালীর অক্ষমতা ও ঔদাসীন্যের স্মরণস্তম্ভের মত স্থাণু হইয়া আছে। কথা বলে না, নড়েও না। উহাকে ভুলিতেও পারি না, উাকে মনে রাখাও শক্ত। ওজর এই যে, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষা অসম্ভব। ওটা অক্ষমের ভীরুর জের। কঠিন বৈ কি, সেইজন্যেই কঠোর সঙ্কল্প চাই। একবার ভাবিয়া দেখুন, একে ইংরেজি তা’তে সায়ান্স্ তার উপরে, দেশে যে সকল বিজ্ঞানবিশারদ আছেন তাঁরা জগদ্বিখ্যাত হইতে পারেন কিন্তু দেশের কোণে এই যে একটুখানি বিজ্ঞানের নীড় দেশের লোক বাঁধিয়া দিয়াছে এখানে তাঁদের ফলাও জায়গা নাই—এমন অবস্থায় এই পদার্থটা বঙ্গসাগরের তলায় যদি ডুব মারিয়া বসে তবে উহার সাহায্যে সেখানকার মৎসশাবকের বৈজ্ঞানিক উন্নতি আমাদের বাঙালীর ছেলের চেয়ে যে কিছুমাত্র কম হইতে পারে এমন অপবাদ দিতে পারিব না।

 মাতৃভাষা বাংলা বলিয়াই কি বাঙালীকে দণ্ড দিতেই হইবে? এই অজ্ঞানকৃত অপরাধের জন্য সে চিরকাল অজ্ঞান হইয়াই থাক্— সমস্ত বাঙালীর প্রতি কয়জন শিক্ষিত বাঙালীর এই রায়ই কি বহাল রহিল? যে বেচারা বাংলা বলে সেই কি আধুনিক মনুসংহিতার শূদ্র? তার কানে উচ্চশিক্ষার মন্ত্র চলিবে না? মাতৃভাষা হইতে ইংরেজি ভাষার মধ্যে জন্ম লইয়া তবেই আমরা দ্বিজ হই?

 বলা বাহুল্য, ইংরেজি আমাদের শেখা চাইই— শুধু পেটের জন্য