পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
পরিচয়

 আলো আর কালো অর্থাৎ আলো আর না-আলোর দ্বন্দ্ব খুবই একান্ত। রংগুলি তারই মাঝখানে মধ্যস্থতা করে। ইহারা যেন বীণার আলাপের মীড়—এই মীড়েব দ্বারা সুর যেন সুরের অতীতকে পর্য্যায়ে পর্য্যায়ে ইসারায় দেখাইয়া দেয়—ভঙ্গীতে ভঙ্গীতে সুর আপনাকে অতিক্রম করিয়া চলে। তেমনি রঙের ভঙ্গী দিয়া রেখা আপনাকে অতিক্রম করে; রেখা যেন অরেখার দিকে আপন ইসারা চালাইতে থাকে। রেখা জিনিষটা স‍ুনিদ্দিষ্ট,— আর রং জিনিষটা নির্দ্দিষ্ট অনির্দ্দিষ্টের সেতু, তাহা সাদা কালোর মাঝখানকার নানা টানের মীড়। সীমার বাধনে বাঁধা কালো রেখার তারটাকে সাদা যেন খুব তীব্র করিয়া আপনার দিকে টানিতেছে, কালো তাই কড়ি হইতে অতিকোমলের ভিতর দিয়া রঙে রঙে অসীমকে স্পর্শ করিয়া চলিয়াছে। তাই বলিতেছি রং জিনিষটা রেখা এবং অরেথার মাঝথানের সমস্ত ভঙ্গী। রেখা ও অরেথার মিলনে যে ছবির সৃষ্টি সেই ছবিতে এই মধ্যস্থের প্রয়োজন। অরেখ সাদার বুকের উপর যেখানে রেখা-কালীর নৃত্য সেখানে এই রংগুলি যোগিনী। শাস্ত্রে ইহাদের নাম সকলের শেষে থাকিলেও ইহাদের কাজ নেহাৎ কম নয়।

 পূর্ব্বেই বলিয়াছি সাদার উপর শুধু-রেখার ছবি হয়, কিন্তু সাদার উপর শুধু-রঙে ছবি হয় না। তার কারণ, রং জিনিষটা মধ্যস্থ— দুই পক্ষের মাঝখানে ছাড়া কোনো স্বতন্ত্র জায়গায় তার অর্থ ই থাকে না।

 এই গেল বর্ণিকাভঙ্গ।

 এই ছবির ছয় অঙ্গের সঙ্গে কবিতার কিরূপ মিল আছে তাহা দেখাইলেই কথাটা বোঝা হয় ত সহজ হইবে।

 ছবির স্থূল উপাদান যেমন রেখা তেমনি কবিতার স্থূল উপাদান হইল বাণী। সৈন্যদলের চালের মত সেই বাণীর চালে একটা ওজন