পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৃপণতা
১৪৯

 রেলে ইষ্টিমারে যখন দেশের সামগ্রীকে দূরে ছড়াইয়া দিত না, বাহিরের পৃথিবীর সঙ্গে আমদানি রফতানি একপ্রকার বন্ধ ছিল আমাদের সমাজের ব্যবস্থা তখনকার দিনের। তখন ছিল বাঁধের ভিতরকার বিধি। এখন বাঁধ ভাঙিয়াছে, বিধি ভাঙে নাই।

 সমাজের দাবি তখন ফলাও ছিল। সে দাবি যে কেবল পরিবারের বৃহৎ পরিধির দ্বারা প্রকাশ পাইত তাহা নহে—পরিবারের ক্রিয়াকর্ম্মেও তার দাবি কম ছিল না। সেই সমস্ত ক্রিয়াকর্ম্ম পালপার্ব্বণ আত্মীয় প্রতিবেশী অনাহূত রবাহ‍ূত সকলকে লইয়া। তখন জিনিষপত্র সস্তা, চালচলন সাদা, এই জন্য ওজন যেখানে কম আয়তন সেখানে বেশি হইলে অসহা হইত না।

 এদিকে সময় বদলাইয়াছে কিন্তু সমাজের দাবি আজো খাটো হয় নাই। তাই জন্মমৃত্যুবিবাহ প্রভৃতি সকল রকম পারিবারিক ঘটনাই সমাজের লোকের পক্ষে বিষম দুর্ভাবনার কারণ হইল। এর উপর নিত্যনৈমিত্তিকের নানাপ্রকার বোঝা চাপানোই রহিয়াছে।

 এমন উপদেশ দিয়া থাকি পূর্ব্বের মত সাদাচালে চলিতেই বা দোষ কি? কিন্তু মানবচরিত্র শুধু উপদেশে চলে না,—এ ত ব্যোমযান নয় যে উপদেশের গ্যাসে তার পেট ভরিয়া দিলেই সে উধাও হইয়া চলিবে। দেশকালের টান বিষম টান। যখন দেশে কালে অসন্তোষের উপাদান অল্প ছিল, তখন সন্তোষ মানুষের সহজ ছিল। আমাদের আর্থিক অবস্থার চেয়ে ঐশ্বর্য্যের দৃষ্টান্ত অনেক বেশি বড় হইয়াছে। ঠিক যেন এমন একটা জমিতে আসিয়া পড়িয়াছি যেখানে আমাদের পায়ের জোরের চেয়ে জমির ঢাল অনেক বেশি,—সেখানে স্থির দাঁড়াইয়া থাকা শক্ত, অথচ চলিতে গেলে সুস্থভাবে চলার চেয়ে পড়িয়া মরার সম্ভাবনাই বেশি।

 বিশ্বপৃথিবীর ঐশ্বয্য ছাতা জুতা থেকে আরম্ভ করিয়া গাড়ি বাড়ি পর্য্যন্ত নানা জিনিষে নানা মূর্তিতে আমাদের চোখের উপরে