পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
পরিচয়

পড়িতেছেন, বাইবেল হইতে সত্যধর্ম্মের সারসংগ্রহ করিতেছেন, অ্যাডাম সাহেবকে দলে টানিয়া ব্রাহ্মসভা স্থাপন করিয়াছেন; সমাজে নিন্দায় কান পাতিবার জো নাই, তাঁহাকে সকলেই বিধর্ম্মী বলিয়া গালি দিতেছে, এমন কি, যদি কোনো নিরাপদ সুযোগ মিলিত তবে তাঁহাকে মারিয়া ফেলিতে পারে এমন লোকের অভাব ছিল না, কিন্তু কি বলিয়া আপনার পরিচয় দিব সে বিষয়ে তাঁহার মনে কোনোদিন লেশমাত্র সংশয় ওঠে নাই। কারণ হাজার হাজার লোকেও তাঁহাকে অহিন্দু বলিলেও তিনি হিন্দু এ সত্য যখন লোপ পাইবার নয় তখন এ সম্বন্ধে চিন্তা করিয়া সময় নষ্ট করিবার কোনো দরকার ছিল না।

 বর্ত্তমানকালে আমরা কেহ কেহ এই লইয়া চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছি। আমরা যে কি, সে লইয়া আমাদের মনে একটা সন্দেহ জন্মিয়াছে। আমরা বলিতেছি আমরা আর কিছু নই আমরা ব্রাহ্ম। কিন্তু সেটা ত একটা নূতন পরিচয় হইল। সে পরিচয়ের শিকড় ত বেশি দূর যায় না। আমি হয়ত কেবলমাত্র গতকল্য ব্রাহ্মসমাজে দীক্ষা লইয়া প্রবেশ করিয়াছি। ইহার চেয়ে পুরাতন ও পাকা পরিচয়ের ভিত্তি আমার কিছুই নাই? অতীতকাল হইতে প্রবাহিত কোনো একটা নিত্য লক্ষণ কি আমার মধ্যে একেবারেই বর্তায় নাই?

 এরূপ কখনো সম্ভবই হইতে পাবে না। অতীতকে লোপ করিয়া দিই এমন সাধ্যই আমার নাই; সুতরাং সেই অতীতের পরিচয় আমার ইচ্ছার উপর লেশমাত্র নির্ভর করিতেছে না।

 কথা এই, সেই আমার অতীতের পরিচয়ে আমি হয়ত গৌরব বোধ করিতে না পারি। সেটা দুঃখের বিষয়। কিন্তু এইরূপ যেসকল গৌরব পৈতৃক তাহার ভাগবাটোয়ারাসম্বন্ধে বিধাতা আমাদের সম্মতি লন না,— এই সকল সৃষ্টিকার্য্যে কোনোরূপ ভোটের প্রথাও নাই। আমরা কেহ বা জন্মনির সম্রাটবংশে জন্মিয়াছি আবার কাহারো বা এমন বংশে জন্ম- — ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে বা কালো অক্ষরে যাহার