পাতা:পরিণীতা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হু হু করিয়া ঢুকিতে লাগিল। মনে পড়িল, গত বৎসর তঁহার দ্বিতীয়া কন্যার শুভ-বিবাহে বউবাজারের এই দ্বিতল ভদ্রাসনটুকু বাঁধা পড়িয়াছে এবং তাহারও ছয় মাসের সুদ বাকী। দুর্গাপূজার আর মাসখানেক মাত্র বিলম্ব আছে-মেজ মেয়ের ওখানে তত্ত্ব পাঠাইতে হইবে। আফিসে কাল রাত্রি আটটা পৰ্যন্ত ডেবিটা-ক্রেডিট মিলে নাই, আজ বোলা বারোটার মধ্যে বিলাতে হিসাব পাঠাইতেই হইবে। কাল, বড়-সাহেব হুকুম জারি করিয়াছেন, ময়লা বস্ত্ৰ পরিয়া কেহ আফিসে ঢুকিতে পারিবে না, ফাইন হইবে, অথচ গত সপ্তাহ হইতে রাজকের সন্ধান মিলিতেছে না, সংসারের অৰ্দ্ধেক কাপড়-চোপড় লইয়া সে বোধ করি নিরুদেশ । গুরুচরণ আর ঠেস দিয়া বসিয়া থাকিতেও পারিলেন না, হুকাটা উচু করিয়া ধরিয়া এলাইয়া পড়িলেন। মনে মনে বলিলেন, ভগবান, এই কলিকাতা শহরে প্রতিদিন কত লোক গাড়ী-ঘোড়া চাপা পড়িয়া অপঘাতে মরে, তারা কি আমার চেয়েও তোমার পায়ে বেশী অপরাধী ! দয়াময় ! তোমার দয়ায় একটা ভারী মটর-গাড়ীও যদি বুকের উপর দিয়া চলিয়া যায় ! আন্নাকালী জল আনিয়া বলিল, বাবা ওঠ, জল এনেচি । গুরুচরণ উঠিয়া সমস্তটুকু এক নিশ্বাসে পান করিয়া ফেলিয়া বলিলেন, আঃ, যা, মা, গেলাসটা নিয়ে যা । সে চলিয়া গেলে, গুরুচরণ আবার শুইয়া পড়িলেন । ললিতা ঘরে ঢুকিয়া বলিল, মামা, চা এনেচি, ওঠ। চা’য়ের নামে গুরুচরণ আর একবার উঠিয়া বসিলেন। ললিতার মুখের পানে চাহিয়া ভঁাহার অৰ্দ্ধেক জ্বালা যেন নিবিয়া গেল, বলিলেন, সারারাত জেগে আছিস মা, আয়, আমার কাছে এসে একবার বোস।