পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/১১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৩
পল্লী-সমাজ


পাড়াগাঁয়ে জাত ছোট কি বড়, সে জন্যে কারো এতটুকুও মাথাব্যথা নেই। ছোট ভাই যখন ছোট ব’লে বড়ভাইকে হিংসে করে না, দুএক বছর পরে জন্মাবার জন্যে যেমন তাঁর মনে এতটুকুও ক্ষোভ নেই, পাড়াগাঁয়েও ঠিক তেমনি। এখানে কায়েত, বামুন হয়নি ব’লে একটুও দুঃখ করে না, কৈবর্ত্তও কায়েতের সমান হবার জন্যে একটুও চেষ্টা করে না। বড় ভাইকে একটা প্রণাম করতে ছোটভায়ের যেমন লজ্জায় মাথা কাটা যায় না, তেমনি কায়েতেও, বামুনের একটুখানি পায়ের ধুলো নিতে এতটুকু কুণ্ঠিত হয় না। সে নয় বাবা, জাতিভেদ-টেদ হিংসেদ্বেষের হেতুই নয়। অন্ততঃ বাঙালীর যা’ মেরুদণ্ড—সেই পল্লীগ্রামে নয়।” রমেশ মনে মনে আশ্চর্য্য হইয়া কহিল,—“তবে কেন এমন হয় জ্যাঠাইমা? ওগাঁয়ে ত এত ঘর মুসলমান আছে, তাদের মধ্যে ত এমন বিবাদ নেই। একজন আর একজনকে বিপদের দিনে এমন ক’রে ত চেপে ধরে না। সেদিন অর্থাভাবে দ্বারিক ঠাকুরের প্রায়শ্চিত্ত হয়নি ব’লে, কেউ তার মৃতদেহটাকে ছুঁতে পর্য্যন্ত চায়নি, সে ত তুমি জান।” বিশ্বেশ্বরী কহিলেন,—“জানি বাবা, সব জানি। কিন্তু, জাতিভেদ তার কারণ নয়। কারণ এই যে, মুসলমানদের মধ্যে এখনো সত্যকার একটা ধর্ম্ম আছে, কিন্তু, আমাদের মধ্যে তা’ নেই। যাকে যথার্থ ধর্ম্ম বলে, পল্লীগ্রাম থেকে সে একেবারে লোপ পেয়েচে। আছে শুধু কতকগুলো আচার-বিচারের কুসংস্কার, আর তার থেকে নিরর্থক দলাদলি।” রমেশ