পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/১৪১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩৯
পল্লী-সমাজ


বাহিরে আসিয়াই একেবারে কাঠ হইয়া গেল। সন্ধ্যার ম্লান-ছায়াতেও সেই দীর্ঘ, ঋজু-দেহ চিনিতে তাহার বাকী রহিল না। রমেশ কঠোরস্বরে ডাকিল,—“নেমে আসুন।” বলিয়া তৎক্ষণাৎ নিজেই উঠিয়া গিয়া বজ্রমুষ্টিতে ভৈরবের একটা হাত ধরিয়া ফেলিল। কহিল,—“কেন এমন কাজ কর্‌লেন?” ভৈরব কাঁদিয়া উঠিল, “মেরে ফেল্‌লে রে লক্ষ্মী, বেণী বাবুকে খবর দে।” সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীশুদ্ধ ছেলে-মেয়ে চেঁচাইয়া কাঁদিয়া উঠিল এবং চোখের পলকে সন্ধ্যার নীরবতা বিদীর্ণ করিয়া বহুকণ্ঠের গগনভেদী কান্নার রোলে সমস্ত পাড়া ত্রস্ত হইয়া উঠিল। রমেশ তাহাকে একটা প্রচণ্ড ঝাঁকানি দিয়া কহিল,—“চুপ। বলুন, কেন এ কাজ ক’র্‌লেন?” ভৈরব উত্তর দেবার চেষ্টামাত্র না করিয়া, একভাবে চীৎকার করিয়া গলা ফাটাইতে লাগিল, এবং নিজেকে মুক্ত করিবার জন্য টানাহেঁচড়া করিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে পাড়ার মেয়ে-পুরুষে প্রাঙ্গণ পরিপূর্ণ হইয়া গেল; এবং, তামাসা দেখিতে আরও লোক ভিড় করিয়া ভিতরে ঢুকিতে ঠেলা-ঠেলি করিতে লাগিল। কিন্তু, ক্রোধান্ধ রমেশ সেদিকে লক্ষ্যই করিল না। শতচক্ষুর কৌতূহলী দৃষ্টির সম্মুখে দাঁড়াইয়া সে উন্মত্তের মত ভৈরবকে ধরিয়া একভাবে নাড়া দিতে লাগিল। একে রমেশের গায়ের জোর অতিরঞ্জিত হইয়া প্রবাদের মত দাঁড়াইয়াছিল; তাহাতে তাহার চোখের পানে চাহিয়া এই একবাড়ী লোকের মধ্যে এমন সাহস কাহারও হইল না যে, হতভাগ্য ভৈরবকে