পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/১৯২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লী-সমাজ
১৯০


যদি মরি রমেশ, বেণী আমার মুখে আগুন দেবে। সে হ’লে ত কোনমতেই মুক্তি পাব না। ইহকালটা ত জ্বলে জ্বলেই গেল, বাবা, পাছে পরকালটাও এম্‌নি জ্বলে-পুড়ে মরি, আমি সেই ভয়ে পালাচ্চি রমেশ।” রমেশ বজ্রাহতের মত স্তম্ভিত হইয়া রহিল। আজ এই একটি কথায় সে জ্যাঠাইমার বুকের ভিতরটায় জননীয় জ্বালা যেমন করিয়া দেখিতে পাইল, এমন আর কোন দিন পায় নাই। কিছুক্ষণ স্থির হইয়া থাকিয়া কহিল,—“রমা কেন যাচ্চে জ্যাঠাইমা?” বিশ্বেশ্বরী একটা প্রবল বাষ্পোচ্ছ্বাস যেন সংবরণ করিয়া লইলেন। তার পরে গলা খাটো করিয়া বলিলেন,—“সংসারে তাঁর যে স্থান নেই, বাবা, তাই তাকে ভগবানের পায়ের নীচেই নিয়ে যাচ্চি। সেখানে গিয়েও সে বাঁচে কি না, জানিনে। কিন্তু, যদি বাঁচে, সারা জীবন ধরে এই অত্যন্ত কঠিন প্রশ্নের মীমাংসা কর্‌তে অনুরোধ কর্‌ব, কেন ভগবান্‌ তাকে এত রূপ, এত গুণ, এত বড় একটা প্রাণ দিয়ে সংসারে পাঠিয়েছিলেন এবং কেনই বা বিনা দোষে এই দুঃখের বোঝা মাথায় দিয়ে আবার সংসারের বাইরে ফেলে দিলেন। এ কি অর্থপূর্ণ মঙ্গল অভিপ্রায় তাঁরই, না, এ শুধু আমাদের সমাজের খেয়ালের খেলা। ওরে রমেশ, তাঁর মত দুঃখিনী বুঝি আর পৃথিবীতে নেই।” বলিতে বলিতেই তাঁহার গলা ভাঙ্গিয়া পড়িল। তাঁহাকে এতখানি ব্যাকুলতা প্রকাশ করিতে কেহ কখনও দেখে নাই। রমেশ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। বিশ্বেশ্বরী একটু পরেই কহিলেন,—“কিন্তু, তোর