পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/৩৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লী-সমাজ
৩২


ও স্পর্দ্ধা দেখিয়া অবাক্‌ হইয়া গেল। তখন দীনু রমেশের দিকে চাহিয়া নিজেই বলিল, “না বাবা, গোবিন্দ সত্য কথাই বলেচেন। আমি বড় গরীব, সে কথা সবাই জানে। ওঁদের মত আমার জমি-জমা চাষবাস কিছুই নেই। একরকম চেয়ে-চিন্তে ভিক্ষেসিক্ষে করেই আমাদের দিন চলে। ভালজিনিস ছেলেপিলেদের কিনে খাওয়াবার ক্ষমতা ত ভগবান্‌ দেননি—তাই, বড় ঘরে কাজকর্ম্ম হ’লে ওরা খেয়ে বাঁচে। কিন্তু মনে কোরো না, বাবা, তারিণীদাদা বেঁচে থাক্‌তে তিনি আমাদের খাওয়াতে বড় ভালবাস্‌তেন। তাই, আমি তোমাকে নিশ্চয় বল্‌চি বাবা, আমরা যে আশ মিটিয়ে খেয়ে গেলুম, তিনি ওপর থেকে, দেখে খুসীই হয়েচেন।” হঠাৎ দীনুর গভীর শুষ্ক চোখদুটো জলে ভরিয়া উঠিয়া, টপ্‌টপ্ করিয়া দুফোঁটা সকলের সুমুখেই ঝরিয়া পড়িল। রমেশ মুখ ফিরিয়া দাঁড়াইল। দীনু তাহার মলিন ও শতচ্ছিন্ন উত্তরীয়প্রান্তে অশ্রু মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, “শুধু আমিই নই বাবা! এদিকে আমার মত দুঃখী-গরীব যে যেখানে আছে, তারিণীদার কাছে, হাত পেতে কেউ কখনো অমনি ফেরেনি। সে কথা কে আর জানে বল? তাঁর ডান হাতের দান বাঁ হাতটাও টের পেত না যে! আর তোমাদের জ্বালাতন কর্‌ব না। নে, মা, খেঁদি ওঠ, হরিধন, চল্‌ বাবা ঘরে যাই, আবার কাল সকালে আস্‌ব, আর কি বল্‌ব বাবা রমেশ, বাপের মত হও, দীর্ঘজীবী হও।”