জবাব দিল,—“আমি কিছুই বোল্বো না—বাইরের দরওয়ান তার উত্তর দেবে—” পূজানিরতা মাসীর কর্ণরন্ধ্রে এই অত্যন্ত রুচিকর দলাদলির আলোচনা পৌঁছিবামাত্রই তিনি আহ্নিক ফেলিয়া রাখিয়া উঠিয়া আসিলেন। বোন্ঝির কথা শেষ না হইতেই অত্যুত্তপ্ত খৈএর মত ছিট্কাইয়া উঠিয়া কহিলেন, “দরওয়ান কেন? আমি বল্তে জানিনে? নচ্ছার ব্যাটাকে এম্নি বলাই বল্ব যে, বাছাধন জন্মে কখন আর মুখুয্যেবাড়ীতে মাথা গলাবে না। তারিণী ঘোষালের ব্যাটা ঢুকবে নেমত্যন্ন কর্তে আমার বাড়ীতে? আমি কিছুই ভুলিনি বেণীমাধব! তারিণী তার এই ছেলের সঙ্গেই আমার রমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনও ত আর আমার যতীন জন্মায় নি—ভেবেছিল, যদু মুখুয্যের সমস্ত বিষয়টা তা হ’লে মুঠোর মধ্যে আস্বে—বুঝলে না বাবা বেণি! তা যখন হ’ল না, তখন ঐ ভৈরব আচায্যিকে দিয়ে কি সব জপতপ, তুক্তাক্ করিয়ে মায়ের কপালে আমার এমন আগুন ধরিয়ে দিলে যে, ছ’মাস পেরুল না, বাছার হাতের নোয়া, মাথার সিঁদুর ঘুচে গেল! ছোট জাত হ’য়ে চায় কিনা যদু মুখুয্যের মেয়েকে বৌ কর্তে! তেম্নি হারামজাদার মরণও হয়েছে—ব্যাটার হাতের আগুনটুকু পর্য্যন্ত পেলে না! ছোট-জাতের মুখে আগুন!” বলিয়া মাসী যেন কুস্তি শেষ করিয়া হাঁপাইতে লাগিলেন। পুনঃ পুনঃ ছোট জাতের উল্লেখে বেণীর মুখ ম্লান হইয়া গিয়াছিল, কারণ তারিণী ঘোষাল তাহারই খুড়া।