পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪১
পল্লী-সমাজ


এই জ্যাঠাইমার কাছে সন্তানের দাবী করিতেছিল, এখন দেখিল, এ দাবীর অনেক ঊর্দ্ধে তাঁর আপন সন্তানের দাবী জায়গা জুড়িয়া বসিয়া আছে। সে ক্ষণকালমাত্র চুপ করিয়া থাকিয়াই উঠিয়া দাঁড়াইয়া চাপা অভিমানের সুরে বলিল,—“কা’ল পর্য্যন্ত তাই জান্‌তুম, জ্যাঠাইমা! তাই তোমাকে তখন বলেছিলুম, যা’ পারি, আমি একলা করি, তুমি এসো না, তোমাকে ডাকবার সাহসও আমার হয়নি।” এই ক্ষুণ্ণ অভিমান জ্যাঠাইমার অগোচর রহিল না। কিন্তু আর জবাব দিলেন না, অন্ধকারে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। খানিকপরে রমেশ চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই বলিলেন, “তবে একটু দাঁড়াও বাছা, তোমার ভাঁড়ার ঘরের চাবিটা এনে দিই” বলিয়া ঘরের ভিতর হইতে চাবি আনিয়া রমেশের পায়ের কাছে ফেলিয়া দিলেন। রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া থাকিয়া অবশেষে গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া চাবিটা তুলিয়া লইয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। ঘণ্টাকয়েকমাত্র পূর্ব্বে সে মনে মনে বলিয়াছিল, ‘আর আমার ভয় কি, আমার জ্যাঠাইমা আছেন।’ কিন্তু একটা রাত্রিও কাটিল না, তাহাকে আবার নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিতে হইল, “না, আমার কেউ নেই—জ্যাঠাইমাও আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন।”