পাতা:পারস্য ইতিহাস.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পারস্য ইতিহাস।

স্বপ্ন দেখি নৃপ সুতা পাইয়া চেতন।
বিচারিল সত্য নহে কুরঙ্গ স্বপন॥
কিন্তু বিপরীত বোধ হইল তাহার।
ভাবিল কসায়া দেব সপক্ষ আমার॥
স্বপ্ন দিয়া জানাইল পুরুষের রীতি।
অবিশ্বাসী স্নেহহীন জানে না পিরিতি॥
অবল সরলাচারে রাখে অনুরোধ।
পুরুষে করেনা তাহে কৃতজ্ঞতা বোধ॥
এই রূপে ঘৃণা বোধ হইয়া কন্যার।
বিবাহে অশ্রদ্ধা অতি জন্মিল তাহার॥
কিন্তু ভয় দূতগণ আসিবে সভায়।
কি জানি জনক যদি সম্বন্ধ ঘটায়॥
এই জন্যে রাজকন্যা মনের শঙ্কাতে।
উপস্থিতা এক দিন রাজার সাক্ষাতে॥
কুরঙ্গ হেরিয়া ঘৃণা পুরুষে হইল।
ভাঙ্গিয়া স্বপ্নের কথা কিছু না কহিল॥
কান্দিয়া পিতার কাছে এই মাত্র কয়।
"আমার অমতে যেন বিবাহ না হয়"॥
কন্যার ক্রন্দনে তাঁর উপজিল দয়া।
কহিলেন “কান্দিওনা প্রাণের তনয়া॥
রাজাধিরাজের পুত্ত্র পাত্র যদি হন।
তোমার সম্মতি ভিন্ন দিব না কখন॥
বিবাহেতে জননী পিতার অধিকার।
কিন্তু তাহা করিব না দিব্য কসায়ার"॥
পিতার বচন শুনি পুলক হৃদয়ে।
গুণ যুতা নৃপ সুতা যায় নিজালয়ে॥
মনে২ ভাবে সদা নরেন্দ্র নন্দিনী।
বিবাহ না করি সুখে রব একাকিনী॥
কিছুদিন পরে দেশ বিদেশ হইতে।
ঘটক আসিল কত সম্বন্ধ করিতে॥
নিজ নিজ নৃপতির কহে যশ মান।
রাজপুত্র-পাত্র দের করে গুণ গান॥
সকলেরে সমাদর করিয়া রাজন।
করিলেন তাহাদের সস্বাদ শ্রবণ॥

বিদায় করেন রাজা কাতর হইয়া।
ঘটকেরে এই কথা বিনয়ে কহিয়া॥
ইচ্ছায় বিরাহ দেই অসাধ্য আমার।
স্বয়ম্বরা হইবেন বাসন সুতার"॥
বুঝিয়া ভূপের ভাব রাজ দূত গণ।
ক্ষোভিত মানসে দেশে করয়ে গমন॥
ইহা দেখি নৃপবর ভাবেন বিষাদ।
অঙ্গীকারে বুঝি পরে ঘটেবা প্রমাদ॥
রাজাদের দূতগণ ফিরে যায় ঘরে।
কোন্‌ রাজা কোন্‌ দিন সমর বা করে॥
টোগ্রল্‌বি নৃপবর এরূপ ভাবিয়া।
আনিলেন তনয়ার ধাত্রীকে ডাকিয়া॥
বলিল তাহারে রায় বিরস বদনে।
"কন্যার এমন মন হইল কেমনে॥
বিবাহ করিতে কেন চায় না কাহারে।
তুমি বুঝি পরামর্শ দিয়াছ তাহারে"॥,
ধাত্রী কহে “মহারাজ করি নিবেদন।
পুরুষেতে ঘৃণা মোর নাহিক কখন॥
ইহার সম্পর্ক কিছু আমি নাহি জানি।
দেখিয়াছে স্বপ্ন এক নিজে ঠাকুরাণী॥
পুরুষেতে ঘৃণা বোধ হইয়াছে তায়।
এজন্য বিবাহ কন্যা করিতে না চায়"॥
রাজা বলে “কি বলিলে বল পুনর্ব্বার।
স্বপ্নেতে জন্মিল ঘৃণা একি চমৎকার॥
প্রত্যয় করিতে নারি তোমার বচনে।
স্বপ্নেতে বিবাহে ঘৃণা হইল কেমনে"॥
ইহা শুনি সট্লমিমী বিবরণ কয়।
"কুমারীর যে প্রকার স্বপ্ন দৃষ্টি হয়॥
জালে বদ্ধ মৃগ এক স্বপনে হেরিল।
হরিণী আসিয়া তারে উদ্ধার করিল॥
সেই জালে মৃগী বদ্ধা হইল যখন।
পলাইল মুগ তারে ত্যজিয়া তখন॥
অতএব পুরুষেরা হরিণের প্রায়।
নারীর বিপদ কালে ফিরিয়া না চায়॥