পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

হইয়াছিল তাহা বলিতে বলিতে বৃদ্ধ আত্মহারা হইয়া যাইতেন; যুবকও অতিশয় মনোযোগের সহিত সে কথা শ্রবণ করিতেন। শকসাম্রাজ্যের অধঃপতনের পর কিরূপে ধীরে ধীরে সদ্ধর্ম্মের অবনতি হইয়াছিল, তাহার বর্ণনা করিতে তৎকালে বৃদ্ধের সমকক্ষ আর কেহ ছিল বলিয়া বোধ হয় না। বৃদ্ধ, বোধ হয়, আর্য্যাবর্ত্তের নগরে নগরে ভ্রমণ করিয়া সদ্ধর্ম্মের অবনতির কাহিনী সংগ্রহ করিয়াছিলেন। সদ্ধর্ম্মের শাখাভেদ ও শাখাসমূহের মধ্যে কলহ, হীনযান মহাযানের দ্বন্দ্ব কোন্ বিষয়ে, কোন্ ভূক্তিতে, কোন্ নগরে, কোন্ সময়ে, কি ভাবে হইয়াছিল, তাহা বৃদ্ধের জিহ্বাগ্রে অধিষ্ঠান করিতেছিল। সময় বুঝিয়া কূটবুদ্ধি, ভীরু, কাপুরুষ ব্রাহ্মণগণ কিরূপে ধীরে ধীরে উত্তরাপথের নানাদেশে শীর্ষ উত্তোলন করিতেছিল বৃদ্ধ তাহা অবগত ছিলেন। লিচ্ছবীবংশের দৌহিত্র সন্তান হইয়াও সমুদ্র গুপ্ত গোপনে সদ্ধর্ম্মের কতদূর অনিষ্টসাধন করিয়াছিলেন বৃদ্ধ তাহার বিশেষ বিবরণ জানিতেন। কিরূপে গুপ্তবংশীয় সম্রাটগণের সহায়তায় ব্রাহ্মণগণ উত্তরাপথে পুনরায় মুখ প্রদর্শন করিতে সক্ষম হইয়াছিল, কিরূপে ব্রাহ্মণগণের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা সত্ত্বেও উত্তরাপথবাসিগণ রাজভয়ে পুনরায় ব্রাহ্মণদিগের পদানত হইয়াছিল, আত্মবিচ্ছেদে দুর্ব্বল বৌদ্ধসঙ্ঘ কিরূপে ব্রাহ্মণদিগের প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতায় পতিত হইয়াছিল তাহা বর্ণনা করিতে করিতে বৃদ্ধ আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিতেন। অবশেষে কুমার গুপ্ত ও স্কন্দগুপ্তের রাজত্বকালে কিরূপে ব্রাহ্মণগণ রাজবলে বলীয়ান হইয়া আপনাদিগকে ভিক্ষু ও শ্রমণগণের সমকক্ষ বলিয়া পরিচয় দিতেন সে কথা বলিতে বলিতে বৃদ্ধের নয়নদ্বয় প্রদীপ্ত হইয়া উঠিত।

 দীর্ঘকাল ব্রাহ্মণদ্বেষী বৌদ্ধের সহবাসে অবস্থান করিয়া ব্রাহ্মণ্য-

১২৫