পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

আমাদিগের মনে বড় কৌতূহল হইল। যে সমস্ত পাষাণখণ্ড মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপরিভাগে পতিত ছিল তাহারা নবীন স্তূপের পাষাণের ন্যায় প্রবীণ নহে। আমরা মানরজাতির অভ্যুদয়ের প্রারম্ভে বহু শ্বেতকায় মানব দেখিয়াছি, কিন্তু তাহারা যখন পর্ব্বতের সানুদেশ হইতে আনীত হইয়াছে, তখন শ্বেত কৃষ্ণের সংমিশ্রণে নূতন বর্ণের উৎপত্তি হইয়াছে।

 একদিন দ্বিপ্রহরে আমাদিগের উপরিস্থিত পাষাণগুলি হঠাৎ বলিয়া উঠিল যে পূর্ব্ব বর্ণিত শ্বেতাঙ্গের ন্যায় আরও কতকগুলি শ্বেতাঙ্গ মনুষ্য আমাদিগের দিকে আসিতেছে। তখন স্তূপ সান্নিধ্যে হেমন্তের উজ্জ্বল রবিকরস্নাতঃ মধ্যাহ্নে বর্ব্বর বালক-বালিকাগুলি মন্দিরের ভগ্নাবশেষের চারি পার্শ্বে ক্রীড়া করিতেছিল, তাহার শ্বেতাঙ্গ মনুষ্য দেখিয়া ভয়ে পলায়ন করিল। শুনিলাম শ্বেতাঙ্গগণ ভগ্নাবশিষ্টের উপরে উঠিয়া সযত্নে পাষানখণ্ডগুলি পরীক্ষা করিল। তখন ভগ্ন স্তূপের উপরে ভিন্ন ভিন্ন যুগে আনীত বিবিধ বর্ণের পাষাণ পতিত ছিল, তাহারা সযত্নে সেইগুলি পরীক্ষা করিতেছিল। তাহাদিগের করস্পর্শে বোধ হইতেছিল যে বহু প্রাচীন পাষাণ স্পর্শ করিয়া তাহাদিগের হস্তগুলির এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে যে তাহারা স্পর্শমাত্রে বিভিন্নতা অনুভব করিতে পারে। বহুক্ষণ ধরিয়া আমাদিগকে পরীক্ষা করিয়া শ্বেতাঙ্গগণ সূর্য্যাস্তের পূর্ব্বে স্তূপসন্নিধি পরিত্যাগ করিল।

 পরদিন সূর্য্যোদয় হইবার পূর্ব্বে খনিত্র ও রজ্জু হস্তে দলে দলে বর্ব্বর নর-নারী আসিয়া আমাদিগকে বেষ্টন করিয়া ফেলিল। শ্বেতাঙ্গগণের মধ্যে একজন তাহাদিগের সহিত আসিয়াছিল; সে ব্যক্তি বৃদ্ধ, বিরলকেশ কিন্তু তাহার শ্মশ্রু ছিল। বর্ব্বরগণ শ্বেতাঙ্গের নির্দেশ অনুসারে খনন করিতে আরম্ভ করিল, যে প্রস্তরে সিন্দূর লেপন করিয়া তাহারা

১৬৫