পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

শেষ নাগরিক যখন গর্ভগৃহ হইতে নির্গত হইল, তখন সূর্য্যোদয়ের পর দ্বিপ্রহর কাল অতীত হইয়াছে। ক্রমে প্রান্তর ও নগরোপকণ্ঠ, পটমণ্ডপে ও হরিদ্বর্ণ পল্পবাচ্ছাদিত কুটীরে আচ্ছাদিত হইয়া গেল। নাগরিকগণের কথোপকথনে জানিতে পারিলাম যে, দ্বিপ্রহর রাত্রির পূর্ব্বে জনসঙ্ঘের এক প্রাণীও নগরে প্রত্যাবর্ত্তন করিবে না। দেখিলার প্রান্তরে নূতন নগর বসিয়াছে, রাজপুরুষগণ রাজপথ নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন পথিপার্শ্বে—পটমণ্ডপে বা সামান্য বস্ত্রাচ্ছাদনে অসংখ্য বিপণি বসিয়াছে, ক্রেতারও অভাব নাই। নানাস্থান হইতে রন্ধনের ধূম উত্থিত হইতে লাগিল। জনসঙ্ঘ দেব-দর্শনে পূর্ণমনোরথ হইয়া উৎসবানন্দে উন্মত্ত হইল। বেষ্টনের বহির্দ্দেশে পুষ্পবিক্রেতৃগণের বিপণি। দিবা দ্বিপ্রহরের মধ্যে তাহদিগের সঞ্চিত পুষ্পরাশি বিক্রীত হইয়া গেল, দিবাবসানের পূর্ব্বে আর তাহাদিগের পণ্যসংগ্রহ হইল না। স্তূপের পূর্ব্ব তোরণ হইত্তে নগরদ্বার পর্য্যন্ত প্রধান রাজপথ। এই পথে পুষ্পবিক্রেতাদিগের, পরে সুরা ও তাম্বুল বিক্রেতাদিগের বিপণি। দেবার্চ্চন সমাপ্ত হইলে নগরবাসিগণ যেন মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক হইয়া উঠিল; স্তূপবেষ্টনী হইতে বহির্গত হইয়াই দলে দলে আসব পানে ধাবমান হইল। পণ্যশালায় প্রবেশ করিয়া পূর্ণ পাত্র পান, বাহিরে আসিয়া তাম্বুল ক্রয় ও তাম্বুলবিক্রেত্রীর সহিত হাস্য পরিহাস, কণ্ঠ শুষ্ক হইলে পুনরায় আসবের বিপণিতে প্রবেশ, এই কর্ম্মেই বোধ হয় অধিকাংশ নাগরিক দিনযাপন করিয়াছিল। নাগরিকগণ উৎসবের দিন যে পরিমাণে সুরা গলাধঃকরণ করিয়াছিল, তাহাতে সপ্তশতবর্ষ পরে হইলে তাহাদিগকে হূণজাতির সহিত তুলনা করিতাম। বৃক্ষতলে কোন স্থানে বারনারীগণ যন্ত্রসংযোগে নৃত্যগীত আরম্ভ করিয়াছে; তাহাদিগের কম্পিত কলেবর ও রক্তনেত্র কাদম্বের

৫৬