পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাষাণের কথা

প্রথমে মানবজাতির যে উৎসব দেখিয়াছিলাম, তেমন উৎসব আর কখনও দেখিব না। বলিয়াছি, পরে কত শত উৎসব দেখিয়াছি, কিন্তু সেরূপ আনন্দ আর কখনও অনুভব করিনাই। প্রত্যেক উৎসবেই কিছু না কিছু নূতনত্ব ছিল, নূতনত্ব দেখিয়া আনন্দ হইত বটে, কিন্তু সে ক্ষণস্থায়ী; আরম্ভ হইতে শেষ পর্য্যন্ত আনন্দভোগ আর কখনও করি নাই। কারণ বুঝিয়াছ কি? প্রথম উৎসবে মানব জাতি নূতন ছিল। এখন মানবের নূতনত্ব কাটিয়া গিয়াছে, মানবসংশ্লিষ্ট সমস্ত নূতনত্বের জ্যোতিঃ হীনপ্রভ হইয়া পড়িয়াছে। প্রথম উৎসব যেন পুষ্পোৎসব, আটবিক রাজ্যের সমস্ত পুষ্পভার বহিয়া আনিয়া আটবিক নগরবাসী আমাদিগের চরণ প্রান্তে উপস্থিত করিয়াছিল। দ্বিতীয় উৎসব সাজ সজ্জা ও বাহ্যাড়ম্বরের উৎসব, সে উৎসব আমাদিগের জন্য বটে, কিন্তু তথাপি যেন আমাদিগের নহে। তখনও মনে হইত, অতীত কালের পরপারে বসিয়া এখনও মনে হয় সে উৎসব আমাদিগের নহে, সে উৎসব কণিষ্কের। তথ্যগতের শরীর গর্ভস্তূপের সম্মাননার জন্য উৎসব আরব্ধ হয় নাই, সেই উৎসব কুরুবর্ষ হইতে দাক্ষিণাত্য পর্য্যন্ত বিস্তৃত, সে উৎসব বিশাল শকসাম্রাজ্যের অধীশ্বর কণিষ্কের। মহারাজরাজাধিরাজ দেবপুত্ত্র ষাহি কণিষ্ক তীর্থযাত্রায় আসিতেছেন, তাঁহার অভ্যর্থনার জন্য উৎসবের আয়োজন। মেষচর্ম্মপরিহিত পর্ব্বতবাসীর পক্ষে সেরূপ উৎসবের আয়োজন করা অসম্ভব। সাম্রাজ্যের অধীশ্বরের নিমিত্ত সাম্রাজ্যের সমস্ত শক্তি নিযুক্ত করিয়া উৎসবের আয়োজন হইয়াছে। ইহা আটবিক জাতির উৎসব নহে, পর্ব্বতের সানুদেশবাসী বর্ব্বর জাতির উৎসব নহে, সপ্তদ্বীপবাসী প্রাচীন সভ্যজগতের সমগ্র মানব জাতির সমবেত চেষ্টার ফল। ইহাতে নগরবাসিগণ বন হইতে পত্রপুষ্প সংগ্রহ করিয়া আনে নাই, পর্ব্বতবাসী বর্ব্বরজাতি সৃষ্টিকর্ত্তার উদ্যানজাত

৭৭