পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

হইলেন। এইরূপে রজনী দ্বিপ্রহরকাল পর্য্যন্ত সাম্রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত হইতে সমুপস্থিত অমাত্য ও সভাসদ্‌মণ্ডলী উপস্থিত হইলেন। দ্বিপ্রহর অতীত হইলে বোধ হইল, যেন দূরে পর্ব্বতের সানুদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত হইয়াছে; ক্ষণেকের মধ্যেই বোধ হইল, প্রজ্বলিত অগ্নি দ্রুতবেগে স্তূপাভিমুখে অগ্রসর হইতেছে। দুই দণ্ড পরে স্তূপের চতুষ্পার্শ্বে ও কাষ্ঠনির্ম্মিত নগরে তুমুল কোলাহল উত্থিত হইল। চতুর্দ্দিক হইতে, “সম্রাট আসিতেছেন”—কেবল এই শব্দই শ্রুত হইতে লাগিল। অগ্নি নিকটবর্ত্তী হইলে দৃষ্ট হইল, পাষাণাচ্ছাদিত পথের পার্শ্বে উল্কা হস্তে সহস্রাধিক অশ্বারোহী দ্রুতবেগে স্তূপাভিমুখে ধাবিত হইতেছে, তাহাদিগের বাহন ক্ষীণকায় দীর্ঘাকার সিন্ধুদেশীয় অশ্ব, পরিচ্ছদ শ্বেতবর্ণ ও দক্ষিণ হস্তে সপ্তহস্ত পরিমিত উল্কা, দ্বিসহস্র উল্কার আলোকে যে পথ আলোকিত হইতেছিল সেই পথে দুইজন অশ্বারোহী দ্রুতবেগে স্তূপাভিমুখে অগ্রসর হইতেছিলেন, একজন মহারাজ রাজাধিরাজ দেবপুত্র কণিষ্ক ও অপর জন তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্ত্র মহারাজ হুবিষ্ক। সম্রাটের আকার দীর্ঘ, মুখ শ্মশ্রুমণ্ডিত, নাসিকায় ও দক্ষিণ গণ্ডে দীর্ঘ আঘাত চিহ্ন, দেখিলেই বোধ হয়, তাঁহার জীবনের অধিকাংশই যুদ্ধযাত্রায় অতিবাহিত হইয়াছে। তাঁহার কটিদেশে সার্দ্ধদ্ধিহস্ত পরিমিত খড়্গ। তাঁহার পার্শ্বে তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্ত্র হুবিষ্ক—দীর্ঘকায়, কোমলাঙ্গ, শ্মশ্রুবিরহিত, নবীন যুবক; আজীবন সুখানুসন্ধানের চিহ্ন যেন তাঁহার মুখে অঙ্কিত রহিয়াছে। অশ্বারোহিশ্রেণীর পশ্চাদ্ভাগে বিংশতি বা ততোঽধিক পরিচারক দ্রুতগামী অশ্বারোহণে আসিতেছিল।

 সম্রাট আসিতেছেন, শুনিয়া কাষ্ঠময় নগরবাসী আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই পাষাণাচ্ছাদিত পথাভিমুখে ধাবিত হইল। জনতার পেষণে

৮৪