সহিত আমার প্রণয় জন্মিতে লাগিল। আমার বেশ অনুমান হইতে লাগিল যে, তারাদিদিও আমাকে ভালবাসিতে আরম্ভ করিয়াছে; সুতরাং আমিও প্রাণের সহিত তাহাকে ভালবাসিতে আরম্ভ করিলাম। এইরূপে প্রায় এক বৎসরকাল অতীত হইতে না হইতেই বঙ্গদেশ হইতে সংবাদ অসিল, আমার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে। আমি বিধবা হইলাম।
“আমি বিধবা হইলাম সত্য; কিন্তু হিন্দু-বিধবার ধর্ম্ম কিছুই আমাকে প্রতিপালন করিতে হইল না। জানি না, তারাদিদি আমার পিতামাতাকে কি বুঝাইয়া দিল, তাঁহারাও তারাদিদির কথা শুনিয়া তাহারই পরামর্শমত কার্য্য করিলেন। আমার পরিহিত শাটী বা অলঙ্কার প্রভৃতি কিছুই পরিত্যাগ বা পরিবর্ত্তন করিতে হইল না। সধবা অবস্থায় যেরূপ সাজে আমি সজ্জিত থাকিতাম, বিধবা অবস্থাতেও আমি সেইরূপ সাজে সজ্জিত থাকিতে লাগিলাম।
“আমি বিধবা হইলাম সত্য; কিন্তু বৈধব্যযন্ত্রণা যে কি প্রকার, তাহার কিছুই অনুভব করিতে পারিলাম না। সধবাবস্থা ও বিধবাবস্থা উভয় অবস্থাই আমার পক্ষে সমান বোধ হইতে লাগিল। সধবা অবস্থায় আমার মনে যেরূপ সুখ বা দুঃখ ছিল, বিধবা অবস্থাতেও ঠিক সেইরূপই অনুভব করিতে লাগিলাম, তাহার কিছুমাত্র তারতম্য বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না। আহারীয় দ্রব্যের মধ্যে কেবল মৎস্য মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হইল, এবং এক সন্ধ্যা ব্যতীত অন্নাহার করিতে পারিতাম না। তাহাও অতি সামান্য দিবসের নিমিত্ত; বোধ হয়, এক বৎসরের অধিক আমাকে সেই নিয়ম প্রতিপালন করিতে হয় নাই।