পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাহাড়ে মেয়ে।
১৩

ব্যতিক্রম হইতেছে বলিয়া বোধ হইতে লাগিল মাত্র। পূর্ব্বে তারাদিদি সময়ে সময়ে একটী ঘটী হস্তে ভিক্ষা করিতে বাহির হইত, এবং আমাদিগের সকলেরই বিশ্বাস ছিল, ভিক্ষাই তারাদিদির জীবনধারণের একমাত্র উপায়। কিন্তু এক্ষণে আর তাহাকে ভিক্ষায় গমন করিতে দেখিতে পাইতাম না; অথচ তাহার আহারাদির ব্যয় নির্ব্বাহে কোনরূপ অনটন হইতেছে, তাহাও বুঝিতে পারিতাম না। অধিকন্তু পূর্ব্বাপেক্ষা তাহার সাংসারিক অবস্থা যেন একটু ভাল হইয়াছে বলিয়াই বোধ হইত।

 “আমি তারাদিদির স্বামীকে কখনও দেখি নাই। শুনিয়াছি, তারাদিদির একটী বৈষ্ণব ছিল; কিন্তু আমার জন্মবার বহুপূর্ব্বে সে নিরুদ্দেশ হইয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছিল। নিরুদ্দেশ হইয়া কেন সে দেশত্যাগী হয়, তাহার কারণ কেহই অবগত ছিল না, বা তারাদিদিকে জিজ্ঞাসা করিলেও, সে তার কোনরূপ পরিষ্কার উত্তর প্রদান করিত না।

 “তারাদিদি যদিও আমাদিগের বাড়ীর সংলগ্ন গৃহে বাস করিত, তথাপি গ্রামের ভিতর যে স্থানে কোনরূপ গোলযোগ উপস্থিত হইত, সেই স্থানেই তারাদিদিকে দেখিতে পাওয়া যাইত। গ্রামের স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে যে স্থানে কোনরূপ কলহ উপস্থিত হইত, সেই স্থানেই তারাদিদিকে সর্ব্বাগ্রে দেখিতে পাওয়া যাইত। যে স্থানে বিবাহ প্রভৃতি কোনরূপ শুভ কর্ম্মের সূচনা হইত, বিনা-আহ্বানে তারাদিদি সেই স্থানে গিয়া অগ্রেই উপস্থিত হইত। গ্রামের ভিতর বা গ্রামের সন্নিকটবর্ত্তী অপর কোন গ্রামে এরূপ কোন বিবাহই হয় নই, যেখানে তারাদিদি সমস্ত রাত্রি বাসর ঘরে না কাটাইয়াছে। এক কথায়, তারাদিদি সকল স্থানেই ও সকল কর্ম্মেই থাকিত।