কি চিরস্থায়ী হইবে? যদি ইনি আমাকে কখনও পরিত্যাগ করেন, তাহা হইলে এই অপরিচিত স্থানে আমার কি দশা হইবে? তখন আমি কোথায় যাইব, এবং কাহার আশ্রয় গ্রহণ করিব? ঈশ্বর না করুন, যদি আমি কখনও কোন রোগগ্রস্ত হই, তাহা হইলেই বা আমার দশা কি হইবে? পিতামাতা ত আর আমাকে গ্রহণ করিতে পারিবেন না; হিন্দু-সমাজ ইহাতে কখনই সম্মতি প্রদান করিবেন না। আর যদি তাহারা লোকাপবাদ সহ্য করিয়া, সমাজের দিকে দৃষ্টি না রাখিয়া, বা আমার জীবনের উপর হস্তক্ষেপ না করিয়াও আমাকে গ্রহণ করতে সম্মত হন, তাহা হইলেই বা আমি সেই স্থানে ফিরিয়া যাইব কোন মুখে? প্রতিবেশীর গঞ্জনা, পাড়ার মেয়েদের কানাঘুষা, শত্রুপক্ষের বিদ্রুপবর্ষী আমোদ-আহ্লাদ আমি ত কখনই সহ্য করিতে পারিব না। স্নানের ঘাটে, বসিবার বৈঠকখানায়, পূজার মন্দিরে, চলিবার পথে, বিবাহের বাসরে, সভায়, মজলিসে, সকল স্থানেই আমার চরিত্রের কথা কাণে কাণে, মুখে মুখে ফিরিবে। কেহ কেহবা আমাকে শুনাইয়া শুনাইয়া বলিবে, দেখাইয়া দেখাইয়া হাসিবে; কিন্তু ইহা ত আমি কোন প্রকারেই সহ্য করতে পারিব না। আমার অদৃষ্টে যাহাই হউক না কেন, যখন ঘরের বাহির হইয়াছি, তখন আমি এই স্থানেই থাকিব। এ বাড়ীর সকলেই ত সুখে কালযাপন করিতেছে দেখিতেছি, তবে আমিই বা না পারিব কেন? এইরূপে নানাপ্রকার চিন্তা করিতে করিতে সেই রাত্রি অতিবাহিত হইয়া গেল।”
পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাহাড়ে মেয়ে।
২৭