পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
দারোগার দপ্তর, ১৪৬ সংখ্যা।

হইল, আমারও অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হইল। এখন হইতে রাত্রিদিন আমার ঘরে আমোদ-প্রমোদ চলিতে লাগিল, সুখের তরঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে সুরার ঢেউ বহিতে লাগিল। প্রত্যেকেই মনে করিতে লাগিলেন, আমি যদিও কলিকাতার বেশ্যামণ্ডলীর রীত্যনুসারে সকলের সহিত প্রকাশ্যে আমোদ-আহ্লাদ করিয়া থাকি, কিন্তু অন্তরে তাঁহাকে ভিন্ন আর কাহাকেও জানি না। ফলতঃ যাঁহারা আমার ঘরে আসিতেন, তাঁহারা সকলেই আমার মুখের মিষ্ট কথায় ভুলিতেন; কিন্তু আমার অন্তরের ভাব কেহই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেন না; ক্রমে তাঁহারা আপনার আশাকে নিবৃত্ত ও লালসাকে চরিতার্থ করিয়া, আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিতে লাগিলেন; আমাকে আমার আশাতিরিক্ত অর্থ-সাহায্য করিতেও কেহ কুণ্ঠিত হইলেন না।

 “এইরূপ উপায়ে ক্রমে ক্রমে আমার যথেষ্ট সঙ্গতি হইতে লাগিল; সোণায় আমার অঙ্গ ঢাকিয়া গেল। নাকে, কাণে বড় বড় সাদা সাদা মুক্তা ঝুলিতে লাগিল; অঙ্গুলিতেও কোন কোন সুবর্ণময় অলঙ্কারের মধ্যে সাদা, লাল, সবুজ প্রভৃতি বর্ণের বড় বড় পাথর ঝক্‌মক্ করিতে লাগিল। অধিক কি, কলিকাতার ভিতর নিজের একখানি বড়গোছের তেতলা বাড়ীও হইল; উহার দরজায় ছিটের মির্জাই আঁটা, লাল পাকড়ী বাঁধা, দুইজন দ্বারবানও বসিল, এবং বাটীর ভিতর চারি পাঁচজন দাস-দাসীও ঘুরিতে লাগিল। এক কথায়, এখন আমার সম্পদ দেখে কে, আমার সম্মুখে দাঁড়ায় কে? এবং আমার বাটীর ভিতর সহজে আসেই বা কে? আমি আর কাহাকেও তোষামোদ করি না, কড়া কথা ভিন্ন আর কাহাকেও মিষ্ট কথা বলি না,