পাতা:পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাহাড়ে মেয়ে।
৩৭

ইয়া দিয়া আসিলাম। কিন্তু গাড়ী না ছাড়িতে ছাড়িতেই আমার মন অস্থির হইতে লাগিল, তাঁহাকে দেখিতে ইচ্ছা হইতে লাগিল। তিনি গমন করিলে পর, মনের কষ্টে দিন কাটাইতে লাগিলাম। কিন্তু সাতদিবস আর আমাকে কষ্টভোগ করিতে হইল না, পঞ্চম দিবসে কালীবাবু তাঁহার সেই পুত্রটীর সহিত আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার নিকট জানিতে পারিলাম, দুই দিবস হইল, তাঁহার স্ত্রীর মৃত্যু হইয়াছে। তাঁহার আর কেহ না থাকায়, তাঁহার যাহা কিছু ছিল, সমস্ত বিক্রয় করিয়া, আপন পুত্রটীর সহিত এখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 “কালীবাবুর সেই পুত্রটীর নাম হরি। হরি দেখিতে তাহার পিতা অপেক্ষাও সুশ্রী, এবং তাহার কথাগুলি অতিশয় মিষ্ট ও সুখশ্রাব্য! আমার সন্তান-সন্ততি জন্মে নাই; সন্তানের যে কি মোহিনী মায়া, তাহা আমি এতদিবস জানিতাম না; এতদিন পু্ত্র-স্নেহ আমার হৃদয়কে অধিকার করিতে পারে নাই। কিন্তু পরের পুত্রের নিমিত্ত এখন আর আমার তাহাও বাকী রহিল না; হরিকে আমি আমার পুত্রের মত দেখিতে লাগিলাম। ক্রমে ক্রমে তাহাকে অতিশয় ভালবাসিতে লাগিলাম, তাহাকে খাওয়াইলে-পরাইলেই আমার মনে সুখবোধ হইত। রাত্রিদিন তাহাকে আমার নিকটেই রাখিতাম, মুহূর্তের নিমিত্ত চক্ষুর অন্তরাল করিতাম না। এইরূপে আরও কিছুদিন কাটিয়া গেল।

 “কিছুদিন কাটিল সত্য, কিন্তু আমার সঞ্চিত অর্থ যাহা কিছু ছিল, সমস্তই নিঃশেষিত হইয়া গেল! দাসদাসীকে জবাব দিলাম, দ্বারবানকে বিদায় করিলাম। ইহাতেও কিন্তু আমার সবিশেষ কিছু সুবিধা হইল না; ক্রমে ক্রমে দুই একখানি করিয়া