পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভূমিকা

১। ধোপার পাট। (১—২৮ পৃঃ)

 ‘ধোপার পাট’ পালাটির অধিকাংশ মৈমনসিংহের অন্তর্গত সাকুয়াইবাট্টাগ্রাম নিবাসী রজনীকান্ত ভদ্র এবং অবশিষ্টাংশ চরশম্ভুগঞ্জবাসী দীন গোপ এবং কীর্ত্তনখোলার ‘মধুর বাপ’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তির নিকট হইতে সংগৃহীত হয়। চন্দ্রকুমার ১৯২৪ সালের ১৫ই নবেম্বর তারিখে আমাকে পালা-গানটি পাঠান। পালাটি ৪৬৯ ছত্রে সমাপ্ত; আমি ইহাকে ১৩টি অধ্যায়ে বিভক্ত করিয়াছি।

 তরুণ বয়স্ক রাজকুমার ও রজক-কন্যা কাঞ্চনমালার প্রেমকাহিনী অবলম্বনে এই পালা-গানটি রচিত। এই গীতিকাটির অনেক ছত্রই বৈষ্ণবকবিদিগকে স্মরণ করাইয়া দিবে,— সে সম্বন্ধে আমরা পরে আলোচনা করিব। একদিকে চপলমতি নবীন প্রেমিক রাজকুমারের উদ্দাম এবং সাহসিক প্রেমনিবেদন; অপরদিকে স্বীয় অবস্থাবৈগুণ্য এবং সামাজিক-হীনতায় ম্রিয়মাণ ভীরু কাঞ্চনমালার সশঙ্ক, দ্বিধাপূর্ণ অথচ পরিপূর্ণ আবেগময় প্রেমের ভাব কবি অতি সুচারুরূপে অঙ্কন করিয়াছেন গল্প-ভাগও অতি সুকৌশলে গ্রথিত হইয়াছে। এই গীতিকার বৈশিষ্ট্য ইহার অনাড়ম্বর সংযতভাব এবং বাক্যপল্লবশূন্যতা। গল্প-ভাগরচনায় “মহুয়ার” ন্যায় এই গানেও নাট্যকৈৗশল বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হয়। পুকুরপাড়ের দৃশ্য, বর্ষার অভিসার, প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন প্রভৃতি চিত্র পর-পর অতি সুন্দরভাবে সাজান হইয়াছে। সহসা রাজক্রোধে গল্পের গতি পরিবর্ত্তিত হইয়া পাঠকের চিত্তে পর্য্যাপ্তপরিমাণে কৌতূহল-রসের সৃষ্টি করিয়াছে। রাজকুমারের কাঞ্চনমালার সহিত দেশত্যাগ, নূতন দেশের রজকের গৃহে আশ্রয় গ্রহণ, গৃহকর্ম্মে ও ব্যবসায়ে আশ্রয়দাতাকে সাহায্যপ্রদান প্রভৃতি ব্যাপারে আখ্যান-ভাগের রচনানৈপুণ্য সূচিত হইয়াছে। তার পর রাজকুমারীর প্রেমপত্র প্রণয়ি-যুগলের অনাবিল প্রেমপ্রবাহের মধ্যে একটা বৃহৎ অন্তরায়ের সৃষ্টি করিয়া ফেলিল,— তজ্জন্য পাঠক একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। তমসাগাজীর কাহিনীও অপ্রত্যাশিত ভাবে গল্পের