মনেও করে নাই। ফস্ করিয়া কোনো উত্তর জোগাইল না। বলিয়া ফেলিল, “হাঁ, আজ খুব ঝগড়া হইয়া গিয়াছে।”
চক্রবর্তী দাওয়ার দিকে অগ্রসর হইবার উপক্রম করিয়া বলিল, “কিন্তু সেজন্য দুখি কাঁদে কেন রে।”
ছিদাম দেখিল, আর রক্ষা হয় না; হঠাৎ বলিয়া ফেলিল, “ঝগড়া করিয়া ছোটোবউ বড়োবউয়ের মাথায় এক দায়ের কোপ বসাইয়া দিয়াছে।”
উপস্থিত বিপদ ছাড়া যে আর-কোনো বিপদ থাকিতে পারে, এ কথা সহজে মনে হয় না। ছিদাম তখন ভাবিতেছিল, ‘ভীষণ সত্যের হাত হইতে কী করিয়া রক্ষা পাইব।’ মিথ্যা যে তদপেক্ষা ভীষণ হইতে পারে তাহা তাহার জ্ঞান হইল না। রামলোচনের প্রশ্ন শুনিবামাত্র তাহার মাথায় তৎক্ষণাৎ একটা উত্তর জোগাইল এবং তৎক্ষণাৎ বলিয়া ফেলিল।
রামলোচন চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “অ্যাঁ! বলিস কী। মরে নাই তো!”
ছিদাম কহিল, “মরিয়াছে।” বলিয়া চক্রবর্তীর পা জড়াইয়া ধরিল।
চক্রবর্তী পালাইবার পথ পায় না। ভাবিল, ‘রাম রাম! সন্ধ্যাবেলায় এ কী বিপদেই পড়িলাম। আদালতে সাক্ষ্য দিতে দিতেই প্রাণ বাহির হইয়া পড়িবে।’ ছিদাম কিছুতেই তাঁহার পা ছাড়িল না; কহিল, “দাদাঠাকুর, এখন আমার বউকে বাঁচাইবার কী উপায় করি।”
মামলা-মকদ্দমার পরামর্শে রামলোচন সমস্ত গ্রামের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। তিনি একটু ভাবিয়া বলিলেন, “দেখ্, ইহার এক উপায় আছে। তুই এখনই থানায় ছুটিয়া যা— বল্ গে, তোর বড়ো ভাই দুখি সন্ধ্যাবেলা ঘরে আসিয়া ভাত চাহিয়াছিল, ভাত প্রস্তুত ছিল না বলিয়া স্ত্রীর মাথায় দা বসাইয়া দিয়াছে। আমি নিশ্চয় বলিতেছি, এ কথা বলিলে ছুঁড়িটা বাঁচিয়া যাইবে।”