পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 ভারতবর্ষ । আমাদের মতে, “গুপ্ত’-শব্দ-প্রতিষ্ঠা-মূলক ; উপাধি’ বা ‘জাতি’ বাচক নহে। গুপ্তগুপ্ত-বংশের প্রতিষ্ঠাতা। বংশের আদি-পুরুষের “গুপ্ত’ নাম পরবর্তী বংশধরগণের নামের সহিত সংযোজিত হইয়াছিল-ইহাই আমরা মনে করি। আমাদিগের এতদুক্তির সমর্থক প্রমাণ-পরম্পরা ভারতেই বৰ্ত্তমান। পাশ্চাত্য দেশেও তাহার অসদ্ভাব দেখি না। এখনও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে,-রাজপুতানা, মাড়োয়ার, গুজরাট এবং অন্যান্য স্থানে, পরবর্তী পুরুষের নাম—পূর্ববৰ্ত্তী পুরুষের নামের সহযোগে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। আমাদের সিদ্ধান্তের প্রধান সমর্থক—গুপ্ত-নৃপতি চন্দ্রগুপ্তের সহিত লিচ্ছবি-রাজকন্যা কুমারদেবীর পরিণয়। ‘লিচ্ছবিজাতি’। মনুসংহিতায় ‘ব্রাত্য-ক্ষত্ৰিয়’ বলিয়া উল্লিখিত। ‘ব্রাত্য-ক্ষত্ৰিয়” -- ক্ষত্ৰিয় পৰ্যায়ভুক্ত । পাশ্চাত্য প্রত্নতত্ত্ববিৎ নিষ্টার টমাস গুপ্ত-রাজগণের যে বংশলতা প্ৰদান করিয়াছেন, তাহাতে মহারাজ গুপ্ত এবং তঁহার বংশধবগণ সুৰ্য্যবংশোদ্ভব বলিয়া উল্লিখিত । “নেপাল বংশাবলি” গ্রন্থে দুইটী বিভিন্ন প্ৰসিদ্ধ বংশের উল্লেখ আছে। তাহদের মধ্যে ‘লিচ্ছবি” বংশের নাম দৃষ্ট হয়। সেখানে লিচ্ছবি গণ সুৰ্য্যবংশোদ্ভব বলিয়া অভিহিত । “বংশাবলিতে’ যে বংশলতা প্রদত্ত হইয়াছে, তাহাতে সূৰ্য্যকে বংশের আদি ধরিয়া লইয়া, তৎপুত্র মনু, তৎপুত্ৰ ইক্ষাকু প্রভৃতি ক্রমে রঘু অজ দশরথ প্রভৃতি পৰ্যন্ত পুৰুষানুক্রমিক বংশলতি নির্দিষ্ট আছে। আবাও, দশরথের পর পুত্ৰ-পৌত্ৰাদি-ক্রমে আট জন নৃপতি রাজত্ব করিয়াছিলেন ; তঁহাদিগের নাম সে বংশলতায় সন্নিবিষ্ট নাই। তার পরই লিচ্ছবি নামেয় উল্লেখ। “নেপাল বংশাবলি” গ্রন্থের সেই বংশলতার মতে লিচ্ছবিগণ ক্ষত্ৰিয় প্ৰতিপন্ন হন। প্ৰথম চন্দ্ৰগুপ্ত লিচ্ছবি-রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিবাহ করেন। তখন লিচ্ছবি-জাতি মগধে বিশেষ প্ৰতিষ্ঠাসম্পন্ন। সুতরাং গুপ্তবংশের সহিত লিচ্ছবি-রাজ্যের উদ্বাহ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গুপ্তগণের ক্ষত্ৰিয়ত্বই প্ৰতিপন্ন হয়। কারণ, স্বজাতি এবং সমবংশই সৰ্ব্বকালে বিবাহ-সম্বন্ধ-প্রতিষ্ঠায় প্রশস্ত বলিয়া পবিগৃহীত হইয়াছে। লিচ্চিবিরাজ যখন গুপ্তবংশের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা—স্ববংশের এবং স্বকুলের অনুকূল বলিয়া বুঝিয়াছিলেন, তখনষ্ট তিনি কন্যাদানে প্ৰস্তুত হইয়াছিলেন। গুপ্ত-গণের ক্ষত্ৰিয়ত্ব বিষয়ে কোনও সন্দেহের কারণ উপস্থিত হয় নাই ; তাই সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল। ভারতের সামাজিক প্রথার আলোচনায় বুঝা যায়,-বিভিন্ন জাতীয় স্ত্রী-পুরুষের পরস্পর বিবাহ সৰ্ব্বকালেই নিন্দনীয় হইয়াছে। আর সে বিবাহের সন্তান-সন্ততি সমাজে “পতিত’ মধ্যে গণ্য হইয়াছে। ‘লিচ্চিবি’-রাজ-ক্ষত্ৰিয়। তিনি একজন হীনজাতীয় ব্যক্তিকে কন্যাসম্প্রদান করিয়া সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হইবেন,-সহসা তাহা মনে করিতে পারি না। তখন সমাজ-বন্ধন দৃঢ় ছিল। ধৰ্ম্মের প্রতিও তখন প্ৰগাঢ় অনুরাগ ছিল। ধৰ্ম্মনীতিউল্লঙ্ঘনে তখন সহসা কেহ সাহসী হইতেন না। তদ্ভিন্ন, গুপ্তবংশের তখনকার সে অবস্থায় এমন কিছু প্রলোভন লিচ্ছবিরাজ দেখিতে পান নাই, যাহাতে সহসা তিনি জাতি-ধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিতে প্ৰলুব্ধ হইবেন । “ঘর বর ভাল দেখিয়াই’ মানুষ আপনার প্রিয়তমা কন্যা সম্প্রদান করিয়া থাকে।