পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d & R ভারতবর্ষ । তিমিরেই রহিয়া যাইত; নচেৎ, ভারতে যে বিভীষিকার উত্তাল তরঙ্গস্রোত প্ৰবাহিত হইয়াছিল, সে স্রোতোমুখে ভাসিয়া বুঝি বা ভারতের গৌরব-রবি চিরতরে অস্তমিত হইত। ইতিহাসে যে “সুবৰ্ণ-যুগের’ দৃষ্টান্ত দেখি, গুপ্ত-সাম্রাজ্য-অপিতু গুপ্তরাজগণের শাসন-কাল, সেই সুবর্ণযুগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ! প্ৰাচীন ভারতের আদর্শ-সভ্যতার অবিরাম প্রবাহ অন্তঃসলিলা ফন্তু-প্রবাহের ন্যায় লুকায়িত ছিল ; গুপ্ত-সাম্রাজ্যের অভু্যদয়ে সে প্রবাহ পূর্ণতায় তটিনীর খরস্রোতের ন্যায় তারতরবেগে প্রবাহিত হইল । কোনটী রাখিয়া কোনটীব কথা বলিব ? যেমন সাহিত্য, তেমনি দর্শন, তেমনি বিজ্ঞান, তেমনি শিল্প—আদর্শ সভ্যতার যাহা কিছু শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, এ সময় সকলই পূর্ণ দুৰ্ত্তি লাভ করিয়াছিল ! ঐতিহাসিকগণ তাই এই সময়ের ভারতের ইতিহাসকে, রাণী এলিজাবেথের এবং ষ্টয়ার্ট বংশীয় নৃপতিগণের শাসনাধীন ইংলণ্ডের ইতিহাসের সহিত তুলনা করিয়া থাকেন। অগাষ্টাসের শাসনাধীনে রোম-সাম্রাজ্যে যেমন সর্বতোমুখী উন্নতির প্রবল প্ৰবাহ প্ৰবাহিত হইয়াছিল, গুপ্ত-বংশের রাজত্ব-কালে সেইৰূপ ভারতের বিভিন্নমুখী উন্নতি সাধিত হইয়াছিল। ফলতঃ, কেবল যে অসমুদ্র হিমাচলের অধীশ্বর বলিয়াই ইতিহাসে গুপ্তবংশীয় রাজগণের প্রতিষ্ঠা, তাহা নহে; তঁহাদের প্রতিষ্ঠার কারণ।--ভারতের সর্বতোমুখী উন্নতির মূলে তাহাদের ঐকান্তিক প্রভাব ও প্ৰচেষ্টা। ቀላ ইতিহাস-প্ৰসিদ্ধ ‘নবরত্ন’-এই গুপ্ত-বংশেরই গৌরবের পরিচায়ক। বৈদেশিক বাণিজ্যের গৌরব গরিমায়, এই গুপ্তরাজগণই গৌরবান্বিত। ফলতঃ, যেদিক দিয়াই দেখি, যে বিষয়েরই আলোচনা করি,-সর্বত্র গুপ্তরাজগণের অশেষ কীৰ্ত্তির নিদর্শন প্ৰাপ্ত হই। সাহিত্যে নবরত্ন, বিজ্ঞানে অৰ্য্যভট্ট ও বরাহমিহির, বৌদ্ধ-সাহিত্যে “সুবন্ধু’ ও ‘বসুবন্ধু’’ প্রভৃতি-কাহাকে রাখিয়া কাহার কথা বলিব ! এক এক জন যেন এক একটা ধ্রুবতারারূপে ভারত-গগনে উদিত হইয়াছিলেন ! সিংহল-দেশীয় এবং অজন্তার গুহাগাত্ৰাঙ্কিত শিল্প পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞগণের সিদ্ধান্ত-গুপ্তরাজগণের রাজত্বকালে তদপেক্ষাও অতি উচ্চ অঙ্গের শিল্প-সৌন্দৰ্য ভারতে স্ফৰ্ত্তি লাভ করিয়াছিল। 譬 来 ংস্কৃত-ভাষার পূর্ণ-বিকাশ। সাহিত্যের অলঙ্কার-ভাষা। ভাষার স্ফৰ্ত্তি—আদর্শ সভ্যতার পূর্ণ নিদর্শন। গুপ্তংশের প্রতিষ্ঠায় সংস্কৃত-ভাষার ও সংস্কৃত সাহিত্যের পূর্ণ বিকাশে সভ্যতার গৌরব-গরিমা পূর্ণ প্রকটত। ব্ৰাহ্মণ্য-প্রভাব-পূর্ণ হিন্দুধৰ্ম্মের পুরুরুদ্দীপনে সংস্কৃত-ভাষার পূর্ণ প্ৰভুত্বগুপ্ত-প্ৰাধান্তের এক প্ৰধান বিশেষত্ব ! খৃষ্ট-পূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোক পালি-ভাষার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেন। খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে মহাক্ষত্রপ রুদ্ৰদমন সংস্কৃত-ভাষাকে শ্রেষ্ঠ আসন প্ৰদান করিয়া যান। তখন তিনি যে সকল লিপি উৎকীর্ণ করিয়াছিলেন, তাহাতে সংস্কৃত ভাষার প্রাধান্তই পরিদৃষ্ট হয়। তদবধি সংস্কৃত ভাষা গৌরবের শ্রেষ্ঠ আসনে সমাসীন।