পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RN2 ভারতবর্ষ । (২৩) দৈবপুত্ৰগণ, সাহীিগণ, সাহানুসাহীগণ, শকগণ এবং মুরুন্দিগণ সকলেই ভঁাহার বশ্যতা স্বীকার করেন এবং নানাবিধ উপঢৌকনাদি প্ৰদান করিতেন। (২৪) সমুদ্র-গুপ্ত বিজিত রাজগণের কাহাকেও সিংহাসনে পুনঃ প্ৰতিষ্ঠিত করেন, কাহাকেও বা রাজপ্ৰত্যাৰ্পণে সম্বৰ্দ্ধনা করিয়া বিশেষ যশস্বী হইয়াছিলেন। (২৬) সমুদ্র-গুপ্ত দিয়ার অবতার, অসহায় নিরশ্নের পিতৃমাতৃস্থানীয় এবং নিরাশ্রমে আশ্রয় ছিলেন। তিনি ধনন্দ ( কুবের ), বরুণ এবং ইন্দ্রের সমকক্ষ ছিলেন ( অর্থাৎ তিনি বিত্তৈশ্বৰ্য্যে কুবের, দয়ায় ও করুণায় বরুণদেব এবং শক্তিসামর্থ্যে ইন্দ্রের ন্যায় ছিলেন)। (২৭) ইন্দ্রের গুরু কশ্যপ এবং তুম্বুরু ও নারদ প্ৰভৃতি পরাজিত হন। অর্থাৎ সমুদ্র-গুপ্ত অসাধারণ জ্ঞানী এবং গীতবাদ্য বিশারদ ছিলেন । (২৮) সমুদ্রগুপ্ত নররূপে দেবতা ছিলেন। তিনি মহারাজ গুপ্তের প্রপৌত্র, মহারাজ ঘটোৎকচের পৌত্র এবং মহারাজাধিরাজ প্ৰথম চন্দ্রগুপ্তেব পুত্ৰ। লিচ্চবিরাজকন্যা মহাদেবী কুমারদেবীর গর্ভে র্তাহার জন্ম হয়। (৩১) পশুপতির জটানিন্মুক্ত সুরধুনী গঙ্গা যেমন বিভিন্ন-মুখে প্রধাবিত হইয়া বিভিন্ন দেশজনপদের পবিত্রতা-সাধন করিয়াছিলেন ; সমুদ্রগুপ্তের সুবিমল যশোভাতি তেমনি বিভিন্নমুখে প্ৰতিভাত হইয়া ভুবনত্ৰয় আলোকিত ও পবিত্রতাসম্পন্ন করিয়াছিল। ইত্যাদি । বিবিধ । এলাহাবাদের এই স্তন্তলিপি বিবিধ তথ্যের সন্ধান দেয়। সমুদ্র-গুপ্তের দিগ্বিজয়-প্রসঙ্গে ভারতের এবং ভারতের বহির্ভাগের বহু জনপদের এবং নৃপতির পরিচয় প্ৰাপ্ত হই। সমুদ্র-গুপ্তের প্রভুত্ব সুদূৱ সিংহলে এবং অক্ষাস নদীর তীয় পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল, লিপিতে উল্লিখিত সাহী প্ৰভৃতি বাক্যে তাহা স্পষ্ট উপলব্ধ করি। পারম্ভের যিনি অধিপতি, তিনিই “সাহী” বা ‘সা” উপাধিভুষণে ভূষিত। লিপিতে সেই “সাহী” এবং ‘সাহানুসাহী” পদদ্বয়ের উল্লেখে মনে হয়,-পারস্য প্রভৃতি জনপদ এবং রুশিয়া সমুদ্রগুপ্তের প্রাধান্য স্বীকার করিয়াছিল। সমুদ্র-গুপ্তের নিকট সিংহল-রাজের উপঢৌকনাদি-প্রেরণেও সেই পরিচয় প্ৰাপ্ত হই। বুঝিতে পারি,-সিংহলরাজও তখন সমুদ্র-গুপ্তের অধীনতা স্বীকার করিয়াছিলেন এবং রাজকরা-হিসাবে প্ৰতি বৎসর বহু অর্থ প্রেরণ করিতেন। সমুদ্র-গুপ্ত একজন সঙ্গীত-বিদ্যা-বিশারদ ছিলেন,-লিপিতে তাহারও নিদর্শন বর্তমান । লিপিতে আছে,-“শিশিতবিদগ্ধমতিগন্ধৰ্ব্বললিতৈীব্রীড়িতত্ৰিদশপতিগুরু-তুঙ্গুরু-নারাদাদের্বিদ্বজৰ নোপজীব্যানেকক্রিয়াভিঃ প্রতিষ্ঠিতকবিরাজশব্দস্য সুচিরস্তোন্তব্যানেকাণ্ডুতোদরচরিতম্ভ।” ইহাই সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গীত-বিদ্যায় পারদর্শিতার নিদর্শন। সঙ্গীতবিদ্যার অপর নাম-গান্ধৰ্ব্ব্য বিস্ত । অভিধানে গন্ধৰ্ব্ব শব্দের এক পৰ্য্যায়-“গীতিরূপাঃ বচঃ।” ললিত প্ৰভৃতি রাগরাগিণীর নাম । সঙ্গীত-বিজ্ঞায় সমুদ্র-গুপ্ত দেবতাদিগের শ্রেষ্ঠ গায়ক তুঘুরু এবং নারীদের অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। সমুদ্র-গুপ্তের কবি-প্রতিভাও অসাধারণ ছিল। তাহার কবিত্ব-শক্তির তুলনা ছিল না। সঙ্গীত বিড়ায় এবং কবিত্বে পারদর্শী ছিলেন বলিয়াই সমুদ্র-গুপ্ত শ্ৰেষ্ঠ “কবিরাজ” উপাধিভুষণে দুষিত ।