পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

يعم. সমুদ্র-গুপ্ত । SC) সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যসীমা ক্ষত্রপদিগের রাজ্য পৰ্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল। তঁহাদের কেহ কেহ সমুদ্র-গুপ্তের প্রাধান্য সহসা স্বীকার না করায় সমুদ্রগুপ্ত র্তাহাদের রাজ্য আক্রমণে বাধ্য হইয়াছিলেন। সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রায় ক্ষত্রপ প্ৰভাবের পরিচয় পাইয়া কেহ কেহ এইরূপ অনুমান করেন। লিপির অন্তর্গত শক’-শব্দে দ্বিবিধ মত দেখিতে পাই। কেহ সৌরাষ্ট্রের শকদিগকে, কেহ আবার গান্ধার এবং কাবুলের কুশন-নৃপতিকে ঐ শক শব্দে নির্দেশ করেন। যাহা হউক, ঐরূপ নির্দেশে ভারতের বহির্ভাগেও সমুদ্র-গুপ্তের রাজ্য-বিস্তৃতির পরিচয় প্রাপ্ত হই। বৈদেশিক নৃপতির পরিচয় । বৈদেশিক জাতির পরিচয়ে এক অভিনব তথ্যের সন্ধান পাই। লিপিতে বৈদেশিক নৃপতিগণের নামের মধ্যে “দৈবপুত্ৰ-শাহি-শাহনুসাহি-শক-মুরুন্দৈঃ” পরিদৃষ্ট হয়। অবশ্য ঐ সকল শব্দে তখন কাহাদিগকে লক্ষ্য করা হইত, তাহা নির্দেশ করা কঠিন। অনেকের সিদ্ধান্ত-চারি শত বৎসর পূর্বে যে শক বা কুশীনগণ ভারত আক্রমণ করিয়াছিলেন, “দৈবপুত্ৰ’ বলিতে র্তাহাদিগকেই বুঝাইয়া থাকে। এক সময়ে সমগ্ৰ উত্তর ভারত তঁহাদের অধীন ছিল ; এমন কি, ২৫০ খৃষ্টাব্দ পৰ্যন্তও তঁাহারা ভারতে প্ৰতিষ্ঠিত ছিলেন। সেই হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার জন্যই তাহদের বিরুদ্ধে সমুদ্র-গুপ্তের এই অভিযান। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ বলেন,-“দৈবপুত্ৰ’ শব্দ উপাধিবাচক । চীনা ভাষায় ‘দৈবপুত্র” শব্দ ‘টুইয়েন-টুজু’ রূপে পরিব্যক্ত। চীনাদিগের অনুকরণে কুশীনগণ ঐ উপাধি গ্ৰহণ করেন। “সাহানুসাহী”-ইরাণ-দেশের উপাধি। উহার অর্থ-সমাটের সম্রাট।” সকলের প্রভু বা স্বামী অর্থে ইরাণ দেশে ঐ পদ প্ৰযুক্ত হয় । প্রত্নতত্ত্ববিদগণ বলেন,-বাকৃত্রিয়ার শকদিগের সেই উপাধি ভারতীয় শকানুপতিগণ গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। তঁহাদিগের মতে, “সাহানুসাহী” উপাধি ভারতীয় ‘মহারাজাধিরাজ” উপাধিয় সমতুল। আরা-জেলার লিপিতে ইহাব প্রমাণ বৰ্ত্তমান। সেখানে দ্বিতীয় কাডিফাইসেস এবং কনিক্ষ “মহারাজাধিরাজ সাহী” উপাধিযুক্ত। আর বাসুদেবেব উপাধি-“রাজাধিরাজ সাহী।” “দেবপুত্ৰ’ উপাধি প্রথমতঃ প্ৰাচীন রাজগণের সাধারণ উপাধি ছিল বটে ; কিন্তু পরিশেষে সে উপাধিতে কোনও এক নির্দিষ্ট স্থানের অধিপতিকে বুঝাইত। কুশন বা শকরাজ্য ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইলে, “দেবপুত্ৰ’ স্থানীয় রাজার উপাধি রূপে পরিকল্পিত হয়। অবশ্য তখন চীনাগণ ভারতের নৃপতি বুঝাইতে ‘টি-পৌঁও-কোটান-লো” ( te-poulo-co-tam-lo ) অর্থাৎ “দেবপুত্র” শব্দে প্রয়োগ করিত। “সম্রাট’ বুঝাইতে চীনারা "টুইয়েন-জু’ ( t’ien-tzul ) বলে। সুতরাং ‘দেবপুত্ৰ’ শব্দ ভারতের কোনও প্ৰদেশ-বিশেষের শক-নৃপতিকেই লক্ষ্য করে। “কিদার”-কুশনগণ এক সময়ে “শাহি’ উপাধি গ্ৰহণ করে। সমুদ্র-গুপ্তের বহু পরবস্ত্রী - কালে তাহারা ভারতে প্ৰবেশ করিয়াছিল। গান্ধার-প্রদেশের শাকনৃপতিগণের অনুকরণে, ভারতীয় শকিজাতি ‘শাহী” উপাধি গ্ৰহণ করিয়াছিল,-প্রত্নতত্ত্ববিদগণের ইহাই ধারণা। কিন্তু ‘শাহী শাহানুশাহী” উপাধি দৃষ্ট ভারত-সম্রাটের সমকক্ষ কোনও বৈদেশিক নৃপতির বিষয়ই মনে হয়। ইরাণ-দেশের অথবা তন্নিকটবৰ্ত্তী কোনও রাজ্যের তিনি অধিপতি ছিলেন।