পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতে “হেলেনিক’ প্রভাব । V) পরিশোষক। কিন্তু, পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনায় তাহদের, এই মত ভ্রান্ত বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়া থাকে। আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণ হইতে আরূন্ত করিয়া কুশন-বংশের রাজ্যাবসানকাল পৰ্যন্ত অর্থাৎ গুপ্তবংশের অত্যুদয়ের পূর্ব পৰ্যন্ত, প্ৰায় চারি শতাব্দী কাল, বৈদেশিক জাতির সংশ্রবে, ভারতের কি পরিবর্তন সাধিত হইয়াছিল, তাহা বিচার করিলে বেশ বুঝিতে পারা যায়-বৈদেশিক প্রভাব ভারতের প্রান্তভাগে মাত্ৰ ’বিস্তৃত হইয়াছিল এবং তদ্বারা ভারতের বিশেষ কোনই পরিবর্তন সংসাধিত হয় নাই ; পরস্তু বৈদেশিকগণই তখন ভারতের অঙ্গে অঙ্গ ঢালিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন ; ভারতের ধৰ্ম্ম, ভারতের আচার-ব্যবহার তখন তাহাদিগকেই গ্ৰাস করিয়া ফেলিয়াছিল। আলেকজাণ্ডার মাত্র দেড় বৎসর কাল ভারতে অবস্থান করিয়াছিলেন । তঁহার কল্পনা যতই দূরগামী হউক না কেন,-প্রতিনিয়ত বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত থাকায় তিনি স্থায়ী কোনও বিধান যে প্ৰবৰ্ত্তিত করিতে সমর্থ হন নাই, তাহাতে বিন্দুমাত্ৰ সন্দেহ থাকিতে পারে না। সুতরাং হিন্দুদিগের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যতন্ত্রে বা তঁহাদিগের সমাজ-তন্ত্রে বৈদেশিক প্রভাবের কোনও স্থায়ী পরিবর্তনের চিহ্ন বৰ্ত্তমান নাই। প্রকৃতপক্ষে, আলেকজাণ্ডার ভারতের রাজনৈতিক ও সমাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন-সাধনে আদৌ সমৰ্থ হন নাই। অপিচ, তেঁাহার মৃত্যুর পর দুই বৎসরের মধ্যেই ভারতে ম্যাসিডনীয় শাসন-যন্ত্রের সমুদায় অঙ্গ বিপৰ্য্যস্ত হইয়|ছিল’। তখন একমাত্র সিন্ধুনদের তীরবর্তী ভূভাগে মুষ্টিমেয় সৈন্য লইয়া ইউডেমাস গ্ৰীকদিগের শেষ নিদৰ্শন-স্বরূপ বৰ্ত্তমান ছিলেন। কিন্তু ৩১৬ পূর্ব-খৃষ্টাব্দের পর সে চিহ্নও একেবারে বিলুপ্ত হয়। আলেকজাণ্ডারের প্রভাবের স্মৃতি-চিহ্ন-স্বরূপ সৌভূতি গ্ৰীকদিগের অনুকরণে কতকগুলি মুদ্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন মাত্র। এতদ্ভিন্ন স্থাপত্য প্রভৃতির শিল্প-সৌন্দৰ্য্যে হেগেনিক প্রভাবের কোনও পরিচয়-চিহ্নই বিদ্যমান নাই। সুতরাং তখন পাশ্চাত্য-শিল্পকলা যে এতদ্দেশে প্ৰবেশ-লাভ করে নাই ; তাহ নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে। তক্ষশিলায় “আইওনিক’ স্তম্ভ সমন্বিত যে মন্দির আবিষ্কৃত হইয়াছে, প্রত্নতত্ত্ববিদগণ তাহাকে প্রথম আজেসের (৮০ পুৰ্ব্ব-খৃষ্টাব্দ) সমসাময়িক বলিয়া সপ্রমাণ করিতে প্ৰয়াস পান। কিন্তু উহার নিৰ্ম্মণাকৌশলে গ্ৰীসদেশীয় শিল্পের কোনও অনুস্থতিই পরিলক্ষিত হয় না। স্তম্ভগুলিতে বৈদেশিক আদর্শের অনুকরণ পরিদৃষ্ট হয় বটে ; কিন্তু তাহাতেও গ্রীসদেশীয় মৌলিকতার কোনও নিদর্শন বৰ্ত্তমান নাই। ইন্দো-গ্ৰীক প্রস্তর-মূৰ্ত্তি-সমূহও আজেসের সমসাময়িক বলিয়াই সিদ্ধান্তিত হয়। কিন্তু ডোমিত্রিয়াস, ইউক্রেটাইডস অথবা মেনাণ্ডারের সমসাময়িক একটী নিদর্শনও পরিদৃষ্ট হয় না। এইরূপে আমরা এতৎসম্বন্ধে এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, কিবা আলেকজাণ্ডার কিবা এন্টিওকাস দি গ্ৰেট, কিবা ডোমিত্ৰিয়াস, কিবা ইউক্রেটাইডস, কিবা মেনাণ্ডারকেহই ভারতীয় সনাতন বিধি-বিধানে বৈদেশিক-ভাবের উন্মেষ করিতে সমর্থ হন নাই। রাজ্যালিপার বশবৰ্ত্তী হইয়া তাহারা ভারতে আসিয়াছিলেন ; যুদ্ধবিগ্রহেই তেঁাহারা সৰ্ব্বদা লিপ্ত ছিলেন ; তাই কোনও স্থায়ী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তাহারা কেহই মনোযোগী হইতে পারেন নাই। পাঞ্জাবে এবং তৎসন্নিকটবৰ্ত্তী প্রদেশে বহুদিন পৰ্যন্ত গ্ৰীকদিগের প্রভাব বর্তমান ছিল বটে ; কিন্তু তাহা হইলেও সে প্রভাব ভারতের অঙ্কে স্থায়ী হয় নাই। তাই গ্রীসের স্থাপত্য, গ্রীসের -viv-6