পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 ভারতবর্ষ । ‘কবিরিপডিনাম বন্দরে ‘কাষ্টম’ অর্থাৎ বাণিজ্য-শুক্ল সংগৃহীত হইত। শুক্ল সংগৃহীত হইলে সত্তদাগরগণ মালের ‘ছার” প্ৰাপ্ত হইতেন। বাণিজ্য-শুক্ল সংগৃহীত হইবার পর, চোল-রাজগণের রাজকীয় নিদর্শন ব্যাস্ত্ৰমূৰ্ত্তিঅঙ্কিত মোহর দ্বারা পণ্য-দ্রব্য চিহ্নিত হইত। মোহরাঙ্কিত দ্রব্য তখন রাজকীয় ভাণ্ডার বা গুদাম হইতে বণিকগণ আপনাপন বিপণীতে এবং গুদামে লাইয়া যাইতে পারিতেন ; অথবা সেখান হইতেই বিক্রয় করিতেন। এই বাণিজ্য-ব্যাপারে একটী বিশেষ তথ্যের সন্ধান পাই। সে তথ্য-চোল-রাজ্যে, বন্দরসমূহে সমুদ্র-বক্ষে আলোক-গৃহের (Light house) বিস্তমানতা। গভীর রাত্রে সেই আলোক-দৃষ্টি সাগরগামী পোতসমূহ গতিবিধি করিত। “রেরুম পদ-আরূপ পদাই’ নামক তামিল-কাব্যে, করোমণ্ডল উপকূলের সন্নিকটে, এইরূপ আলোক-গৃহের বিদ্যমানতার বিষয়ে বর্ণনা আছে। কবি বলিতেছেন,-ইষ্টক-নিৰ্ম্মিত সুদৃঢ় অত্যুচ্চ আলোক-গৃহ-সমূহ নিশাকালে উজ্জল আলোক বিকরণ করিয়া সমুদ্র-গর্ভস্থিত অর্ণবপোত-সমূহকে বন্দরের পথ প্ৰদৰ্শন করিত। ফলতঃ, সভ্য-সমুন্নত দেশে পোতাধিষ্ঠান প্রভৃতির জন্য যে সকল ব্যবস্থার প্রয়োজন, ভারতে তাহার কিছুরই অসদ্ভাব ছিল না । সমুদ্রতীরে ‘প্লাটফরম’ বা উন্নত অবরোহণ-ক্ষেত্র-আধুনিক ‘জেঠির’ ( jetty) কথা স্মৃতিপথে আনয়ন করে। সাগরগামী অর্ণবপো'ত অধুনা যেমন বন্দরে ‘জেঠিতে” নঙ্গর করিয়া থাকে, পোতাধিষ্ঠানে বা “ডকে’ লইয়া গিয়া জাহাজগুলি যেমন মেরামত করা হয়, অতি প্রাচীন কালে ভারতেও সে ব্যবস্থা ছিল,-পূৰ্ববৰ্ত্তী আলোচনায় তাহ প্ৰতিপন্ন হয়। এ সকল নীে-বিভাগে ভারতের শ্রেষ্ঠতার নিদর্শন বলিতে পারি। সামুদ্রিক অভিজ্ঞতার ইহা এক শ্রেষ্ঠ আদর্শ সন্দেহ নাই । যাহারা ‘অসভ্য বর্বর’ বলিয়া ভারতবাসীকে উপেক্ষার চক্ষে দেখেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয় স্মৰণ করিলে, তঁহাদের সে ধারণা ভ্ৰমপূৰ্ণ বলিয়া বুঝিতে পরিবেন। ভারতের সেই সমৃদ্ধির দিনে সভ্যতা-গৰ্ব্বিত পাশ্চাত্য দেশ বর্বরতার অন্ধতম গর্ভে নিমজ্জিত,- ইতিহাস সে সাক্ষ্য বক্ষে ধারণ করিয়া আছে। সমুদ্র-গর্ভে আলোক-গৃহ প্ৰভৃতি সভ্যতার চরম আদর্শ বলিয়া ব্যাখ্যাত হয়। ভারত কত কাল পূৰ্ব্বে সে আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিল, সভ্যজাতির সভ্যতার ইতিহাসেই তাহ পুৰ্ণ প্রকটত। অধুনা সভ্য-সমাজের যাহা আদর্শ বলিয়া ঘোষিত হয়, সে সকলই প্ৰাচীন ভারতেরই অনুসৃতি বলিয়া মনে করি। ফলতঃ, ভারতই পাশ্চাত্যের সকল আদর্শের মূলীভুত। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য-নীতি, দণ্ডনীতি-সর্ববিধ নীতি বিষয়েই পাশ্চাত্য, প্রাচ্যের-প্রধানতঃ ভারতীয় আদর্শের অনুসরণ করিয়াছে ;-ভারতকেই গুরুর আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে—বুঝিতে পারি। পাশ্চাত্যের আধুনিক বাণিজ্য পদ্ধতিতেও ভারতের অনুসরণ, সর্ববিষয়েই উপলব্ধ হয়। شبح و سمت سست