পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ ভারতবর্ষ । রঘুনাথ অনেক সময় বৃক্ষতলে বসিয়া দিন কাটাইয়া দিতেন। তাহার প্রগাঢ় চিন্তার ফলে, অধ্যাপক বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌম অনেক সময় তাহার নিকট তর্কযুদ্ধে পরাজিত হইতেন । অধিক কি, ন্যায়-শাস্ত্র সম্বন্ধে বাসুদেবের টীকা পরবর্তিকালে রঘুনাথের যুক্তিপ্রভাবে নিষ্ফল প্রমাণিত হইয়াছিল। নবদ্বীপের পাঠ সমাপন করিয়া, রঘুনাথ মিথিলার বিদ্যা অধিগত করিবার জন্য উৎসুক হন। সাৰ্ব্বভৌমের সম্মতিক্রমে ছাত্র সাজিয়া রঘুনাথ মিথিলায় গমন করেন। তখনও পক্ষধর মিশ্র জীবিত ছিলেন। পক্ষধর মিশ্রকে বিচারে পরাভূত করিয়া নবদ্বীপে উপাধি-দানের উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিবেন, ইহাই রঘুনাথের লক্ষ্য ছিল। রঘুনাথ এক-চক্ষু-হীন ছিলেন ; তাই প্রধানতঃ তিনি ‘কাণ রঘুনাথ’ বলিয়া অভিহিত হইতেন। একচক্ষুহীন বলিয়। সহপাঠীরা প্রথম প্রথম র্তাহাকে বিদ্রপ করিত। একটা শ্লোক আবৃত্তি করিয়! তাহারা বলিত,—“ইন্দ্র সহস্ৰলোচন, মহাদেব ত্রিলোচন, আর সকলে দ্বিলোচন ; কে হে তুমি একলোচন ?” কিন্তু অধিক দিন ছাত্রগণকে এ বিদ্রুপ করিতে হয় নাই। পক্ষধর মিশ্রের চতুষ্পাঠীতে প্রবেশ-লাভ করিয়া, রঘুনাথ অল্প দিনেই ছাত্রগণের মধ্যে সৰ্ব্বোচ্চ-স্থান অধিকার করেন । সহপাঠিগণ তো দুরের কথা, অধ্যাপক পক্ষধর মিশ্ৰই অনেক সময় রঘুনাথের সহিত তর্কে পরাভব স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেন। ন্যায়ের তর্কে ক্রুদ্ধ হইয়া পক্ষধর মিশ্র এক দিন রঘুনাথকে নীচজনোচিত গলাগলি করেন । নীরবে সে তিরস্কার সহ করিয়। রঘুনাথের প্রাণ প্রতিহিংসানলে জ্বলিয় উঠে । রঘুনাথ পক্ষধর মিশ্রের সংহার-সাধনে কৃতসঙ্কল্প হন। একদিন গভীর নিশায়, তরবারি গ্রহণ কণি, পক্ষধর মিশ্রের মুগুচ্ছেদের জন্য রঘুনাথ নিভৃতে বসিয়া থাকেন। শরৎকাল ; পূর্ণিমার চন্দ্ৰ হাসির ছটায় নভস্তল আলো করিয়া আছেন। সেই শারদীয়া পূর্ণিমা নিশীথে, পক্ষধর মিশ্র আপন সহধৰ্ম্মিণীর পার্শ্বে বসিয়া নৈশ-শোভা দৰ্শন করিতেছিলেন । সেই অবস্থায়, পক্ষধর মিশ্রের সংহার-সাধন করিতে গিলা, রঘুনাথ থমকিয়া দাড়াইলেন। প্রধানতঃ সেই মনোহর রজনীতে পতি-পত্নীর একাসনে উপবেশনের দৃশ্যে র্তাহার হৃদয় চমকিয় উঠিল । তাহার পর তাহদের দুই জনের মধ্যে যে কথোপকথন চলিতেছিল, তাহ শুনিয়া, রঘুনাথ অধিকতর বিচলিত হইয়া উঠিলেন। পতিকে সম্বোধন করিয়া পত্নী কহিলেন,—“নাথ! এই নিশামণির ন্যায় উজ্জ্বল সামগ্রী পৃথিবীতে আর কি আছে ?” পক্ষধর উত্তর দিলেন,—“প্রিয়তমে ! আছে, আছে বৈ কি !-ইহার অপেক্ষাও এক অতুজ্জল সামগ্ৰী আছে। আজ অপরাহ্নে আমি কেবল সেই তাবনাই ভাবিতেছি । বঙ্গদেশ হইতে এক যুবা নৈয়ায়িক আসিয়াছে ; মিথিলাকে সে যেন এক অভিনব সমস্তায় ফেলিয়াছে । আজ প্রাতঃকালে এক বিষম তর্কে সে আমায় পরাজয় করিয়াছে। আমার মনে হয়, তাহার জ্ঞান ঐ পূর্ণচন্দ্রের অপেক্ষাও জ্যোতিষ্মান। সে আজ আমার হুদয়ের অন্ধকার দূর করিয়াছে।” হত্যাভিলাষে প্রস্তুত রঘুনাথ অলক্ষিতে দাড়াইয়। পতি-পত্নীর কথোপকথন শুনিতেছিলেন। পত্নীর প্রশ্নের পর পতির উত্তর যখন শুনিলেন, তাহায় হস্ত হইতে তরবারি আপনা-আপনি জ্বলিত হইয় পড়িল। রঘুনাথ বাষ্পগদগদ কণ্ঠে ছুটিয়া আরিয়া পক্ষধর মিশ্রের পদপ্রাস্তে পড়িয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিতে