পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪৬ ভারতবর্ষ | সে স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ ছিল। যদিও তখন ভৌমিকের সংখ্যা নির্দিষ্ট দ্বাদশ জন ছিল বলির পরিচয় পাওয়া যায় না, কিন্তু ‘ভৌমিক’ বা ‘ভূ ইয়া’ নামে পরিচিত হইয়। বাঙ্গালার বহু ভূম্যধিকারী স্বাধীনভাবে ক্ষমতা-পরিচালনায় সমর্থ ছিলেন। বাঙ্গালার কোন কোন ভূম্যধিকারী দ্বাদশ তৌমিকের অন্তর্ভুক্ত হন, তদ্বিষয়ে মতান্তর আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজবংশ ভৌমিকত্বের সন্মান বা অধিকার লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া প্রতিপন্ন হয়। সুতরাং ভৌমিক-রাজবংশের পরিচয় লইতে গেলে, তাহদের সংখ্যা দ্বাদশের অধিক হইয়া পড়ে। এক সময়ে নিম্নলিখিত ভূস্বামিগণ ভূইয়া বলিয়া পরিচিত ছিলেন—(১) যশোহরের প্রতাপাদিত্য, (২) চন্দ্রদ্বীপের কন্দপ রায়, (৩) সাতৈলের রামকৃষ্ণ, ( s ) ভূষণার মুকুন্দ রায়, ( ৫ ) বিক্রমপুরের কেদার রায়, ( ৬ ) ভুলুয়ার লক্ষ্মণ মাণিক্য, ( ) চন্দ্রপ্রতাপের চাদগাজি, ( ৮ ) চট্টগ্রামের ইশা খা, ( ৯ ) ভাওয়ালের ফজল গাজি। এতদ্ভিন্ন, পুটিয়া, সুসঙ্গ-দুর্গাপুর, তাহেরপুর প্রভূক্তির বরেন্দ্র-ব্রাহ্মণ-রাজবংশ এবং দিনাজপুরের ও বিষ্ণুপুরের রাজবংশ দ্বাদশ-ভৌমিকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলিয়া জানা যায়। তমলুকের রাজারাও ভূইয়। বলিয়া পরিচিত ছিলেন। ১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে মিষ্টার সুইট নামক একজন খৃষ্টধৰ্ম্ম-যাজক পূর্ববঙ্গ-পরিভ্রমণে গমন করেন। তিনি তখন তিন জন হিন্দুকে এবং নয় জন মুসলমানকে স্বাদশ ভৌমিকের অন্তর্ভুক্ত দেখিয়াছিলেন । মোগলগণ যখন বঙ্গদেশে আধিপত্যবিস্তারের চেষ্টা করেন, প্রতাপাদিত্য প্রমুখ ভৌমিকগণ সেই সময়ে বঙ্গদেশে প্রতিষ্ঠাম্বিত ছিলেন। পাঠানগণের সময়ে ভৌমিকগণের ষে স্বাধীনতা ছিল, মোগলগণের বঙ্গাধিকারের পর তাহীদের সে স্বাধীনত খৰ্ব্ব হইবার উপক্রম হয়। সুতরাং তঁাহারা মোগলগণকে বঙ্গাধিকারে বাধা প্রদান করেন । মোগলগণের বঙ্গাধিকার-পক্ষে সে বাধা বড় বিষম বাধা হইয়া দাড়াইয়াছিল। বাঙ্গালার কয়েক জন ভূম্যধিকারী সেই সময়ে যদি মোগল পক্ষে সহায়তা না করিতেন, তাহা হইলে বঙ্গদেশের সকল অংশ অধিকার কর। তাহদের কঠিন হইয়া দাড়াইত। আকবর বাদসাহ যখন দিল্লীর সিংহাসনে সমাসীন, মোগল-গৌরবরবি যখন মধ্যাহ্ন-কিরণ বিকিরণ করিতেছেন, বঙ্গের কয়েক জন ভৌমিক সেই সময়ে মোগলের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হন । তাহাতে ভৌমিকগণ তখনও কিরূপ বলবীৰ্য্যসম্পন্ন ছিলেন, স্বতঃই প্রতীত হয়। বাঙ্গালার শেষ পাঠান নৃপতি দায়ুদ খাঁর হস্ত-স্থলিত হইয়া ৰাঙ্গালার মসনদ মোগলগণের অধিকারে আসিলে, প্রথমে মোগল-দরবার হইতে বাঙ্গালার জন্য মুসলমান-শাসনকর্তা নিযুক্ত হইয়াছিলেন। কিন্তু সেই মুসলমান-শাসনকর্তৃগণ বাঙ্গালায় বিশেষরূপ আধিপত্য বিস্তার করিতে পারেন নাই। পাঠান ও মোগল ভূম্যধিকারিগণ, পূৰ্ব্বে যাহারা আসিয়া বাঙ্গালায় প্রতিষ্ঠান্বিত হইয়াছিলেন, তাহারাও বগুত স্বীকার করিতে চাহেন না ; পরস্তু বাঙ্গালার হিন্দু-ভূস্বামিবৰ্গও অনেকে মোগল-শাসনের বিরুদ্ধাচারে প্রবৃত্ত হন। তখন, সূক্ষদশী আকবর বাদসাহ, হিন্দু-শাসন-কৰ্ত্তার স্বারা বঙ্গদেশ শাসনে প্রবৃত্ত হন। বাদসাহের প্রতিনিধি-শাসনকৰ্ত্ত-রূপে প্রথমে টোডরমল এবং অবশেষে রাজ৷ মানসিংহ বঙ্গদেশের শাসনকৰ্ত্ত হইয়া আগমন করেন। ১৫৮৯ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৬০৪ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত মানসিংহ বঙ্গের শাসনকর্তৃপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ছলে-বলে-কৌশলে