পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

২৫২ ভারতবর্ষ। সাহাবাজখাকে পলাযন করিতে হয়। ফলে ঈশা খাঁ স্বাধীন নৃপতি বলিয়া পরিচিত হন। কিন্তু তখন আকবর বাদসাহ দিল্লীর সিংহাসনে সমারূঢ়, তাহার অমিত প্রভাব দিকে দিকে পরিব্যাপ্ত। ১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে তিনি মানসিংহের উপর পূর্ববঙ্গ অধিকারের ভার অর্পণ করিলেন। মানসিংহ প্রথমেই এগারসিন্ধুর দুর্গ অবরোধ করেন। তখন ঈশ। খ। স্থানান্তরে ছিলেন। দুর্গ অবরোধের সংবাদ পাইয়। ঈশা খা সমরক্ষেত্রে আসিয়। অবতীর্ণ হইলে, কোনও বিশিষ্ট কারণে,মানসিংহের সৈন্যদল যুদ্ধে অনভিলাষ প্রকাশ করে। তখন, ঈশা খার সহিত মানসিংহের দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের প্রস্তাব হয়। বন্দ্ব-যুদ্ধে যে জয়ী হইবে, রাজ্য র্তাহারই অধিকালে আসিবে স্থির হইয়া যায়। মানসিংহ দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে প্রথমে ছলনা করিয়াছিলেন। আপনার অপেক্ষ বলিষ্ঠ জ্ঞানে আপনার জামাতাকে প্রথমে যুদ্ধ-ক্ষেত্রে প্রেরণ করেন। মানসিংহ-ভ্রমে ঈশা খাঁ তাহারই সহিত দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন। তাহাতে ঈশ। খার হস্তে মানসিংহের জামাতার মৃত্যু ঘটে। তখন মানসিংহ, আত্মপরিচয় প্রদান করিয়া, পুনরায় ঈশা খাকে দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে আহবান করেন। মানসিংহের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হইয়া, ঈশ। খী পুনরায় দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন। এবার মানসিংহের—নিজেরও পরাজয় ঘটে। যুদ্ধে প্রথমেই মানসিংহের তরবারি ভগ্ন হয়। ঈশা খা কাপুরুষ হইলে, তদণ্ডেই মানসিংহের জীবন-সংহার করিতে পারিতেন। কিন্তু তাহা না করিয়া তিনি আপন হস্তের তরবারি মানসিংহকে প্রদান করিতে চাহিলেন। কিন্তু মানসিংহও প্রকৃত বীরপুরুষ। তিনি সে তরবারি গ্রহণ করিলেন না। তখন, অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া ঈশা খ্রী নিরস্ত্র অবস্থায় মানসিংহের নিকট মল্ল-যুদ্ধের প্রস্তাব করিলেন। মানসিংহ আর যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন না। পরন্তু তিনি বীরের প্রতি সম্মান-প্রদর্শনের আয়োজন করিলেন। ঈশা খাঁ যথাযোগ্য সম্মান ও উপহার পাইয়া রাজধানীতে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন। ইহার পর ঈশা খাঁ আগ্রায় গমন করিলে, তাহার বীরত্ব-বিকরণ শ্রবণ করিয়া, আকবর বাদসাহ তাহাকে ‘দেওয়ান ও ‘মসনদ জালি’ প্রভৃতি উপাধি-ভূষণে ভূষিত করিলেন। তখন বাঙ্গালার বহু পরগণায় অপ্রতিদ্বন্দ্বিতার সহিত ঈশা খাঁর অধিকার বিস্তৃত হইলো। এই ঈশা খাঁর বীরত্ব-বিবরণ পাঠ করিয়া,কেহ কেহ হয় তো বলিতে পারেন,—“ঈশা খা মুসলমান ছিলেন,তাহার বীরত্ববিবরণে মুসলমানেরই বীরত্ব-কাহিনী প্রকাশ পাইতেছে; তাহাতে হিন্দুর বা বাঙ্গালীর কুতিত্বের নিদর্শন কিছু আছে কি? ঈশা খাব পূর্ব্ব-বিবরণ স্মরণ করিলে, সে তথ্যও নিরূপিত হইতে পারে। ঈশা খার পিত। হিন্দু ছিলেন। তাহার নাম—কালিদাস। হুসেন সাহের রাজত্বকালে কালিদাস মুসলমান-ধর্ম্ম গ্রহণ করেন। ঈশা খা—সেই সূত্রেই মুসলমান। হিন্দুই হউন আর মুসলমানই হউন, তাহার বীরত্ব বঙ্গদেশীয় ভূস্বামীর বীরত্ব বলিয়া চিরদিন বিক্ষোবিত হইবে। বাঙ্গালীর বীরত্বের ও সাহসের এবম্বিধ আরও কত পরিচয় পাওয়া যায়। আলিবন্ধি খায় শাসন-সময়ে রাজা কীর্ত্তিচাদ ও রাজ রামনারায়ণ নবাবের পক্ষ অবলম্বন করিয়া বিদ্রোহী মুস্তফা খাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিয়াছিলেন ৯ সিরাজউদৌলার রাজত্বকালে দেওয়ান মাণিকচাদ ও মোহনলাল যে বীরত্ব প্রদর্শন করেন, ইতিহাস-পাঠকের তাহ অবিদিত নাই। ঐতিহাসিকগণের অঙ্গুসন্ধানেই এখন