পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । ২৭৯ ঐতিহাসিক কালন বলেন,—‘কনিক্ষের পর ত্রিশ জন নৃপতি রাজত্ব করেন ; তাহার পর, বিক্রমাদিত্যের আবির্ভাব হয়। সেই বিক্রমাদিত্যের অপর নাম-হর্ষ বিক্রমাদিত্য । তিনি উজ্জয়িনীর অধিপতি ছিলেন। তিনি শক-কুল নিৰ্ম্মল করেন। কবি মাতৃগুপ্ত র্তাহার অনুগ্রহভাজন হইয়াছিলেন । কাশ্মীর-রাজ্য জয় করিয়া, এই বিক্রমাদিত্য কবি মাতৃগুপ্তের হস্তে সেই রাজ্যের শাসন-ভার অর্পণ করিয়াছিলেন।’ কহান-প্রণীত রাজতরঙ্গিণীর তৃতীয় তরঙ্গে এতদ্বিবরণ বিবৃত আছে। ৭৮ খৃষ্টাব্দে কনিক্ষের বিদ্যমানতার বিষয় অনুধাবন করিয়া, তৎপরবর্তী রাজন্যগণের গড়-পর্তা একটা শাসনকাল স্থির করিয়া লইয়া, সেই হিসাবে খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে বিক্রমাদিত্যের এবং কালিদাসের কাল-নির্ণয় করা হয়। এ মতে, মাতৃগুপ্তই কলিদাস বলিয়া প্রতিপন্ন হন। পূৰ্ব্বোক্ত বিক্রমাদিত্য ভিন্ন রাজতরঙ্গিণীতে আরও এক বিক্রমাদিত্যের উল্লেখ আছে। মাতৃগুপ্তের রাজত্বের ৩৯৪ বৎসর পরে তিনি সিংহাসনারোহণ করেন । ইহার পর-ভোজরাজ বিক্রমাদিত্য । কথিত হয়, উজ্জয়িনী-নগরের অধিপতি ভোজরাজ বিক্রমাদিত্য’ নামে পরিচিত ছিলেন । ১১০০ খৃষ্টাব্দে সেই ভোজরাজের বিদ্যমানত প্রতিপন্ন হয় । এই ভোজরাজেরও নবরত্বের সভা ছিল ; আর, সেই নবরত্বে কালিদাস প্রভৃতির সহিত ভবভূতি, সুবন্ধু, মল্লিনাথ, জয়দেব প্রভৃতির নাম সংযুক্ত আছে। এই ভোজরাজ বিক্রমাদিত্যকেই কেহ কেহ শেষ বিক্রমাদিত্য বলিয়। নির্দেশ করেন । কিন্তু পরবর্তিকালেও বিক্রমাদিত্য নামে বহু নৃপতির বিদ্যমানত প্রতিপন্ন হয়। যাহ। হউক, বক্ষ্যমাণ প্রসঙ্গে তাহাদের বিষয় আলোচনার আবগুক নাই। উপরে যে কয় জন বিক্রমাদিত্যের উল্লেখ করিলাম, এ প্রসঙ্গে তাহাই যথেষ্ট। এইরূপ, যত বিক্রমাদিত্য, তত কালিদাস ; বরং কালিদাসের সংখ্যা আরও অধিক । কালিদাসের নামে কত প্রকারের কত গ্রন্থ প্রচারিত হইয়াছে, তাহার অনুসন্ধান করিলে এ তত্ত্ব কতকটা অধিগত হইতে পারে। কতকগুলি পুস্তকের নাম ;–রঘুবংশ, কুমারসম্ভব, মেঘদূত, ঋতুসংহার, স্বাত্রিংশৎপুত্তলিকা, অভিজ্ঞান-শকুন্তলা নাটক, বিক্রমোর্কশী নাটক, মালবিকাগ্নিমিত্র নাটক, নলোদয়, শৃঙ্গারতিলক, শ্রুতবোধ, সেতুকাব্য, অম্বাস্তব, কালীস্তোত্র, কাব্যনাটকালঙ্কার, ঘটকপর, চণ্ডীকাদণ্ডস্তোত্র, দুর্ঘটকাব্য, নবরত্নমালা, নানার্থকোষ, পুষ্পবাণবিলাস, প্রশ্নোত্তরমালা, রাক্ষসকাব্য, লঘুস্তব, বিশ্ববিনোদকাব্য, বৃত্তরত্নাবলী, বৃন্দাবনকাব্য, শৃঙ্গারসার, শুামলাদণ্ডক, কুণ্ডপ্রবন্ধ, ত্রিপুরাসুন্দরীস্থতিটকা, জ্যোতিৰ্ব্বিদাভরণ, রত্বকোষ, শুদ্ধিচঞ্জিকা, গঙ্গাষ্টক, মঙ্গলাষ্টক, শত্রুপরাজয়শাস্ত্রসার ( শক্রপরাভব ), অভিনবভারতচন্পু, ভাগবতচম্পূ, শৃঙ্গারকোষভাণ, সারসংগ্রহকাব্য ইত্যাদি। এই সকল গ্রন্থের কয়েক খানি গ্রন্থ যে মহাকবি কালিদাসের রচিত গ্রন্থ নহে, তাহ অল্পায়াসেই অবগত হওয়া যায়। দৃষ্টাত্তস্থলে কুণ্ডপ্রবন্ধ, ত্রিপুরাসুন্দরীভূতিটীকা গ্রন্থ-ছুইখানির নাম উল্লেখ করিতে পারি। ঐ দুই গ্রন্থের রচিয়িতার নাম কালিদাস বটে ; কিন্তু প্রথমোক্ত গ্রন্থরচয়িতা আপনাকে বলভদ্র-পুত্র বলিয়। এবং দ্বিতীয়োক্ত গ্রন্থরচয়িত আপনাকে রামগোরিন্দ-পুত্র বলিয়া পরিচয় দিয়। ফালিদাসের গ্রন্থ-প্রসঙ্গে ।