পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

883, ভারতবর্ষ। সমাদর দেখিতে পাই ! এ দৃপ্ত-দর্শনে—এ ভাব স্মরণে, আমরা কি সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারি ? এতদ্বিষয় অস্থধাবন করিলে, অতীত ইতিহাসের অতি প্রয়োজনীয় বিৰিখ উপাদান প্রাপ্ত হই না কি ? ভারতবর্ষের আধুনিক সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা পৰ্য্যালোচনা করিয়া, অনেকে সিদ্ধান্ত করেন যে, ভারতবর্ষ বুঝি বা বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত ছিল, ক্ষুদ্র-শক্তি-সম্পন্ন এক এক রাজা সেই সেই জনপদে আধিপত্য বিস্তার করিয়াছিলেন, আর সেই সকল জনপদে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ধৰ্ম্ম প্রবর্তিত ছিল ; এক প্রদেশের জনগণের সহিত অন্ত প্রদেশের জনগণের বড় একটা সম্বন্ধ-সংশ্রব ছিল না । কিন্তু সংস্কৃত-সাহিত্যের এবম্বিধ বিকাশের বিষয় পৰ্য্যালোচনা করিলে, সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপ ভিত্তিহীন বলিয়া প্রতিপন্ন হয়। রাজ্যে সাৰ্ব্বভৌম সম্রাটের আধিপত্য বিস্তৃত না থাকিলে, এমনভাবে এক ভাষার সর্বত্র সমাদর কখনই সম্ভবপর নহে। হইতে পারে, ভারতে বহু বিভিন্ন ভাষার অস্তিত্ব ছিল ; ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গওঁীতে বিভিন্ন রাজশক্তির বিদ্যমানতার বিষয়ও অনমুভাব্য নছে ; কিন্তু যে সময়ে সংস্কৃত-সাহিত্যে ঐ সকল কাব্য-মহাকাব্য ও নাট্য-কলা বিকাশ পাইয়াছিল, তখন সৰ্ব্বত্রই এক সাৰ্ব্বভৌম রাজশক্তির প্রভাব বিস্তৃত হইয়াছিল এবং সকল ভাষার উপর সংস্কৃত-ভাষা আপন প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল,—ইহা নিঃসংশয়ে মনে করা যাইতে পারে । সংস্কৃত-ভাষার নাট্য-সাহিত্যের দৃষ্টাস্তে বিষয়টা বেশ বিশদীকৃত হয়। সাধারণ ভদ্রলোকের মধ্যে প্রচলিত ভাষাতেই নাটকাদি লিখিত হইয় থাকে। উহার মধ্যে পাত্র-পাত্রীর প্রবর্তনার আবস্তক অনুসারে সাধারণ কথিত-ভাষাও ব্যবহৃত হয় । কিন্তু যে ভাষা অধিকাংশ শ্রোতার বোধগম্য নহে, তাহ কচিৎ ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়। ফলতঃ, নাটকে ব্যবহৃত ভাষা দেশ-প্রচলিত সাহিত্যের ভাষার এবং দেশ-প্রচলিত কথিত-ভাষার আদর্শ বলিয়া মনে করা যাইতে পারে। সকল দেশের সকল নাট্য-সাহিত্যে এ প্রমাণ প্রত্যকীভূত। আধুনিক বাঙ্গালী-সাহিত্যের নাটকাৰলীর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেই এ তথ্য অবগত হওয়া যায়। দেশের লিখিত-ভাষার এবং কথিত ভাষার অাদর্শ প্রকৃষ্ট নাটক মাত্রেই পরিলক্ষিত হইবে । ইহাই প্রধান লক্ষণ ; কোথাও কচিৎ সাধারণ কথিত-ভাষার-রাজধানীর পারিপাশ্বিক স্থানের কথিত-ভাষার পরিবর্তে প্রাদেশিক ভাষার ও অস্ত দেশের ভাষার ব্যবহারও দেখিতে পাওয়া যায় ; কিন্তু সে দৃষ্টাস্ত বিরল। ফলতঃ, স্বপ্ন-দৃষ্টিতে দেখিলে, বেশ দেখিতে পাই, বেশ বুঝিতে পারি—দেশ-প্রচলিত লিখিত ভাষার এবং দেশ-প্রচলিত সাধারণ কথিত ভাষার সমবায়েই নাট্য-সাহিত্য সংগঠিত হয়। তবেই বুঝা যাইতেছে, ভারতে যখন অভিজ্ঞান-শকুন্তল প্রভৃতি নাট্য-সাহিত্যের বিকাশ হইয়াছিল, তখন দেশের pa.w লিখিত ভাবা সংস্কৃত ছিল এবং কথিত ভাষা প্রাকৃত ছিল। এখানে wo 'দেশ' শব্দে-বঙ্গদেশ অথবা উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ অর্থব কোনও বিশেষ ****" প্রদেশ অর্থ হুচিত হয় না ; এখানে দেশ শৰে সমগ্র ভারতবর্ধকেই বুঝাইতে পারে। কারণ, এই নাট্য-সাহিত্য ভারতের কোনও প্রদেশবিশেষের সম্পত্তি নছে —উহ সমগ্র ভারতে সমভাবে সমাদৃত । এক সাৰ্ব্বভৌম সম্রাট এবং এক সাৰ্ব্বভৌম - সাহিত্য ন হইলে কখনই এরূপ ঘটিতে পারে না । স্বতরাং বলিতে হয়,—কালিদাস প্রভৃতির