পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8役8 ভারতবর্ষ। বিবৃত ছিল, শুধুই যে বড়যন্ত্র ব্যবসা-বুদ্ধি বা কলুষকলঙ্কে সমাজ আচ্ছন্ন হইয় পড়িয়াছিল, তাহাও নহে ; ঐ সকলের মধ্যে ধৰ্ম্মালোচনায় ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের অনুষ্ঠানেও কেহ কেহ ব্ৰতী ছিলেন, দেখিতে পাই । রাজগণ এবং বণিকগণ দেবায়তনাদি প্রতিষ্ঠা করিয়া দিয়াছিলেন ; পূজা-উৎসবে অনেক স্থলেই ধুমধাম হইত। ধৰ্ম্মভাবোদীপক নাট্যাভিনয়ে ধৰ্ম্মালোচনার আভাষ পাওয়া যায়। প্রবোধচশ্রোদয় প্রভৃতি নাটক রচনা ও তাহার ভাবগ্রহণ ধৰ্ম্মপ্রাণতার এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন বলা যাইতে পারে। কাব্য-মহাকাব্য এবং থওকবিতা সমূহের মধ্যে এই ধৰ্ম্মভাবের বিকাশ সৰ্ব্বথা পরিলক্ষিত হয়। যজ্ঞানুষ্ঠান, যজ্ঞের বিয়-বিদূরণ—প্রতি কাব্যে মহাকাব্যে এবং নাটকে উল্লিখিত হইয়াছে। খণ্ড-কবিতার মধ্যে ভর্তৃহরি, শঙ্করাচাৰ্য্য প্রভৃতির রচনার যে ধৰ্ম্মভাবের উদ্দীপনা আছে, তাহ পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। খণ্ডকবিতার অঙ্গীভূত স্তোত্রাদিতে ধৰ্ম্মভাবের পরিচয় সৰ্ব্বত্র প্রকাশমান । পাশ্চাতো ভারতীয় সাহিত্যের প্রভাব । পুরাণ ইতিহাস কাব্য-মহাকাব্য-নাটক প্রভৃতির মধ্য দিয়া যেমন সমাজের, ধৰ্ম্মের, রাজনীতির বিবিধ অবস্থা অবলোকন করি ; তেমনই এই সাহিত্যের মধ্য দিয়াই বিদেশের সহিত ভারতের সম্বন্ধ-সংশ্রব দেখিতে পাই। এই সংস্কৃত-সাহিত্যের শব্দ-* তত্ত্ব আলোচনা করিয়াই পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ এখন ভারতীয় আর্য্যগণের সহিত আপনাদের সম্বন্ধ-তত্ত্ব নিরূপণ করিতেছেন । এষ্ট সংস্কৃত-সাঙ্গিত্যের মধ্য দিয়াই জ্ঞানবিজ্ঞানের রশ্মিরেখা দিকে দিকে বিচ্ছুরিত হইয়া আছে। যতই অনুসন্ধান করি, ততই দেখিতে পাই,—দূর অতীত কাল হইতে সে দিন পর্যন্ত ভারতের সাহিত্য ভারতের জ্ঞানের প্রভাব দেশে দেশে বিস্তার করিয়াছে। পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব খণ্ডে এ বিষয় কিছু কিছু আলোচন করা হইয়াছে ; বক্ষ্যমাণ প্রসঙ্গেও কিছু কিছু আলোচনা করার আবশ্বক মনে করি। পূৰ্ব্বে যে সকল কাব্য-মহাকাব্য-নাটকাদির প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হইয়াছে, তাহার সকলগুলিই ভারতবর্ষের সহিত বৈদেশিক সংশ্ৰব-সংঘটনের পূর্ববৰ্ত্তিকালের সম্পং। অথচ, আশ্চর্য্যের বিষয়, কেহ কেহ প্রমাণ করেন, ভারতের কাব্য মহাকাব্য ও নাটকাদিতে কোনও কোনও স্থলে গ্রী কদিগের প্রভাব বিদ্যমান আছে। কিন্তু হুক্ষ-অনুসন্ধান করিলে বিপরীত . ব্যাপারই প্রত্যক্ষীভূত হয়। আলেকজাণ্ডার ভারতবর্ষের প্রান্তভাগে উপস্থিত হইয়া ভারতবর্ষের সহিত কিছুদিন গ্ৰী সর সম্বন্ধ-সংশ্রবের একটু স্বত্রপাত করিয়া দিয়াছিলেন বটে ; কিন্তু তাহাকে ভারতবর্ষের সহিত বৈদেশিক সংশ্রব বলা যায় না। কারণ, তদ্বারা ভারতের ভাষা, ভাব, স্ত্রীতিনীতি বা আচার-পদ্ধতির কোনরূপ পরিবর্তন সাধিত হয় নাই ;–তখনও পর্য্যস্ত ভারতবর্ষ নিজস্ব ভ্ৰষ্ট হয় নাই । তাই কাব্য-মহাকাব্য-নাটকাদির মধ্যে বৈদেশিক সংশ্রবের কোনরূপ আভাষ পাওয়া যায় না। প্রকৃত প্রস্তাবে ভারতে মুসলমান-সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাই বৈদেশিক । সংশ্রবের নিদানভূত। মুসলমানগণের ভারতীগমনের সঙ্গে সঙ্গেই ভাষা-ভাব-রীতিনীতি আচারব্যবহার কিছু কিছু পরিবর্তিত হইতে আরম্ভ হয়। এ হিসাবে বিচার করিয়া দেখিতে গেলে, ঐ সকল সাহিত্য-সম্পৎ যে মুসলমানগণের ভারতীগমনের পূর্ববৰ্ত্তিকালের, তদ্বিষয়ে কোনই সংশয় থাকিতে পারে না । অধুনা পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ নিৰ্দ্ধারণ করেন, ভারতীয় জাৰ্য্যগণ বৈদেশিক সংগ্রব ।