পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৫৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-Ե ভারতবর্ষ। দিনে ফা-হিয়ান পুনরায় ‘কোয়ান-শি-ইন' বলিয়। ইষ্টদেবতাকে আহবান করিলেন। একমনে প্রার্থনা জনাইলেন—“হে দেবতা ! রোষ পরিহার করুন ; প্রকৃতি প্রশান্ত হউক । বহুকষ্ট্রে সংগৃহীত পবিত্র সমগ্ৰীসমূহ লইয়। যেন স্বদেশে চীন-রাজ্যে পৌছিতে পারি।” প্রভাতে প্রকৃতি প্রশান্তভাব ধারণ করলে, বণিক-গণ পরম্পর পরামর্শ করিয়া কহিলেন,— “এই সমন ( শ্রমণ ) আমাদের পোতে আশ্রয় লইয়াছে বলিয়াই যত দুৰ্ব্বিপদ উপস্থিত হইতেছে। এই ভিক্ষুকে একট। দ্বীপে নামাইয়া দিব । একজনের জন্য এতজনকে বিপন্ন করা সমীচীন নহে।” ঐ অর্ণবপোতে ফা-হিয়ানের একজন পৃষ্ঠপোষক (ট্যান-ওয়ে ) ছিলেন। বণিকগণের পরামর্শের বিষয় শ্রবণ করিয়া, তিনি কহিলেন,—“আপনার। যদি এই সমনকে কোনও দ্বীপে নামাইয়া দেন, আমি হান-রাজ্যে পৌছিয়াই রাজার নিকট আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থিত করিব।” হান-রাজ্যের অধীশ্বর বৌদ্ধধৰ্ম্মের অনুরাগী । তিনি ভিক্ষুগণকে এবং ধৰ্ম্মযাজকগণকে সন্মান করিয়া থাকেন । ইহাতে বণিক গণের মনে নানা দুর্ভাবনা উপস্থিত হইল। তখন আর র্তাহার। ফা-হিয়ানকে পোত হইতে নামাইয়া দিতে সাহস করিলেন না। কিন্তু প্রকৃতি পুনরায় উগ্ৰমূৰ্ত্তি ধারণ করিলেন । আকাশ আবার মেঘাচ্ছন্ন হইল। আবার প্রতিকুল বায়ু প্রবাহিত হইতে লাগিল। নাবিকগণ সংক্ষুব্ধ হইলেন। তাহার। সপ্ততি দিবস যব-দ্বীপ পরিত্যাগ করিয়াছেন, পানীয় জল ও খাদ্য-দ্রব্য প্রায় ফুরাইয়া গিয়াছে। তখন আর উপায় কি ? তখন, লবণাক্ত সমুদ্র-জলে পাকাদি আরম্ভ হইল । পানীয় জল প্রত্যেকে দুই সিং' ( প্রায় এক সের মাত্র ) প্রাপ্ত হইবেন স্থির হইল । এইরূপে সকল পানীয় এবং সকল খাদ্য-দ্রব্য নিঃশেষ হইবার উপক্রম হইলে, বণিকেরা পরামর্শ করিয়া পোতাধ্যক্ষকে কহিলেন,—“কোয়াং-চেও বন্দরে পৌছিবার জন্য পঞ্চাশ দিন সময় নির্দিষ্ট ছিল । সে সময় অতীত হইয়াও অনেক দিন কাটিয়া গেল । আমাদের সকল সম্বল ফুরাইল। এখন উত্তর-পশ্চিমাভিমুখে পোত পরিচালনা করিয়া যাহাতে কোনও জনস্থানে উপনীত হওয়া যায়, তাহার ব্যবস্থা করা হউক ।” আরও বার দিন বার রাত্রি জাহাজ চলিল। অবশেষে চাং-কোয়াং প্রদেশের অন্তর্গত 'লেও’ পৰ্ব্বতের দক্ষিণস্থিত উপকুলে পোত উপস্থিত হইল। সেখানে পরিষ্কৃত জল ও খাদ্যশস্যের অভাব হইল না । সমুদ্র-পথে অশেষ ক্লেশ সহ করিয়া, বহুদিন আতঙ্কে অবসাদে কাটাইয়া, বণিকগণ যখন এই উপকূলে আসিয়। পৌছিলেন, তখন র্তাহাদের মনে একটু আশার সঞ্চার হইল । বিশেষতঃ এক জাতীয় বৃক্ষ দেখিয়া, তাহারা যে চীন-দেশে উপস্থিত হইয়াছেন, তাহ। বুঝিতে আর আদেী সংশয় রহিল না। যে বৃক্ষ দেখিয়া চীন-রাজ্যে উপনীত হওয়ার বিষয় মনে হইল, ফা-হিয়ান সে বৃক্ষের নাম লিখিয়া গিয়াছেন,—‘লি-হো-শাই’ । অর্ণবপোত চীনদেশের সীমানায় পৌছিয়াছে বুঝিতে পারিলেও অনেকক্ষণ কোনও লোকজনের সহিত সাক্ষাৎ হইল না, অথবা নিকটে র্তাহার কোনও জনস্থানের চিহ্ন দেখিতে পাইলেন না । কেহ কহিলেন—‘এখনও কোয়াং-চেও বন্দরে পৌছিতে বিলম্ব আছে।’ কেহ কহিলেন—“পোত কোয়াং-চেও বন্দর ছাড়াইয়া আসিয়াছে।’ ফলতঃ, কেহই কোনও স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারিলেন না । তখন কয়েকজন একখানি ক্ষুদ্র