পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । NEుడి অঙ্কও পরশুরাম-গ্রীরামচন্দ্রের সংঘর্ষ-বিষয়ক । জনক, দশরথ প্রভৃতি সকলের জামদগ্ন্যকে পাখনা করিবার চেষ্টায় অকৃতকাৰ্য্যতা। জামদগ্ন্য রাজান্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া অন্তঃপুরের মর্যাদা লঙ্ঘন পুৰ্ব্বক রাজর্ষি জনককেও উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছেন। জনক বলিতেছেন,—“আমার সমস্ত শত্রু বিনষ্ট, বাৰ্দ্ধক্য উপস্থিত, চিত্ত পরব্রহ্মতত্ত্বে নিমগ্ন, ক্ষত্রোতেজ প্রশমিত ; তথাপি জামদগ্ন্যের অত্যাচার দেখিয়া, কর্কশ বচন শুনিয়া, আমার প্রাণ শরাসন গ্রহণে উত্তেজিত হইতেছে। চতুর্থ অঙ্কে,—রাম-লক্ষ্মণের শেষ-বীর্য্যে শূৰ্পনখার ঈর্ষা, মাল্যবান কর্তৃক শূপনথার নিকট গ্রীরামচন্দ্রের ভবিষ্ণু-জীবন বর্ণন, স্ত্রীরামচন্দ্রের বনবাস প্রভৃতি। এই অঙ্কে প্রকাশ, —রাক্ষসী শূৰ্পনখাই মন্থরার শরীরে প্রবেশ করিয়া, ত্রীরামচন্দ্রের বনবাসরূপ অনর্থ ঘটাইয়াছিল। অভিষেক-উৎসবের আয়োজন চলিয়াছে। মন্থরারূপী শূৰ্পনখা একখানি পত্র আনিয়া রাম-লক্ষ্মণকে প্রদান করিল। সে পত্র-যেন কৈকেয়ী বর-প্রার্থনা করিয়া রাজা দশরথকে লিখিতেছেন। অর্থাৎ,—কৈকেয়ী দশরথের সম্মুথে যে কোনও কথা বলিয়াছিলেন, অথবা কৈকেয়ী যে সে বিষয় অবগত ছিলেন, তাহা বুঝা যায় না। দশরথ যখন উৎসব উপলক্ষে কল্পতরুরূপে, যে যাঙ্গ চাহিতেছে—তাহ দান করিতেছেন, খ্রীরামচন্দ্র সেই সময় আসিয় তাহার নিকট কৈকেয়ীর প্রার্থিত বরের বিষয় জ্ঞাপন করিলেন এবং সে প্রার্থন পূরণ জন্য সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধ জানাইলেন। লক্ষ্মণ সেই পত্র পাঠ করিয়া দশরথকে শ্রবণ করাইয়াছিলেন। পত্র শ্রবণে দশরথ মূচ্ছিত হন। যুদ্ধাজিৎ, ভরত, জনক—সকলেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন ; এই অবস্থায় শ্রীরামচন্দ্রের বনগমন হয় । ভরত ঐ বরপ্রদান নিবারণ পক্ষে বিধিমতে চেষ্টা করিয়াছিল ; পরিশেষে তিনি শ্রীরামচন্দ্রের অনুগমন করিতে প্রস্তুত হইয়াছিলেন । কিন্তু স্ত্রীরামচন্দ্রের অনুরোধে পাত্নক অভিষেকে রাজ্যপালনের ভারগ্রহণে সম্মত হইয়া ভরত প্রত্যাবৃত্ত হন। মাতুল যুধাজিৎ এবং প্রজাবৰ্গ পর্য্যন্ত ত্রীরামচন্দ্রের বনগমনে সঙ্গী হইতে ব্যগ্রতা প্রকাশ করিয়াছিলেন। চতুর্থ অঙ্কে এই সকল বিষয় পরিবর্ণিত আছে । পঞ্চম অঙ্কে প্রথমে বিষ্কম্ভকে জটায়ুর ও র্তাহার ভ্রাতা সম্পাতির কথোপকথনে সীতাহরণের পূর্বাভাস স্বচিত হইয়াছে। ঐ অঙ্কে, সীতাহরণ, বালিবধ, বিভীষণ-সন্মিলন প্রভূতি বর্ণিত আছে। ষষ্ঠ অঙ্কে,—লঙ্কাদহন প্রভৃতির বর্ণনা, সীতার সম্বন্ধে রাবণের দুশ্চিস্ত, বিপক্ষ-সেনার লঙ্কাপুরে প্রবেশের অবস্থা, যুদ্ধ প্রভৃতি পরিবর্ণিত। সপ্তম অঙ্কে,— লঙ্কা-বিজয়ের পর পুষ্পক-রথে, বিমান-পথে শ্রীরামচন্দ্র প্রভৃতির অযোধ্যায় প্রত্যাবৰ্ত্তন ও রাজ্যাভিষেক। কালিদাসের রঘুবংশে লঙ্কা হইতে অযোধ্যায় গমনের যে আলেখ্য প্রকটিত দেখি ; মহাবীর-চরিতেও তদনুরূপ এক চিত্ৰপট অঙ্কিত হইয়াছে। বিমান-পথে আগমন-কালে স্ত্রীরামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, বিভীষণ, সুগ্ৰীব প্রভৃতির বাক্যে সেই পথের পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছে। সীতাকে সকলে পূৰ্ব্ব-পরিচিত স্থান-সকল দেখাইতে দেখাইতে অযোধ্যায় প্রত্যাবৃত্ত হইতেছেন। গ্রন্থের উপসংহারে সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া ত্রীরামচন্দ্র রাজ্যের মঙ্গল-কামন করিতেছেন। সে প্রার্থনা, নাটকের লক্ষণ অনুসারেই প্রকটিত দেখি। এ গ্রন্থে কবিত্বের স্ফূৰ্ত্তি অনেক স্থলেই দৃষ্ট হয়। কি মহাবীরচরিত, কি উত্তররামরচিত,—উভয়েরই ঘটনাবলী যদিও সৰ্ব্বজনবিদিত, কিন্তু কবিত্ব প্রভায় উভয়েই পাঠকের হৃদয় পুলকিত করিয়া রাখিয়াছে।