পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o \9 ভারতবর্ষ। দিন দিনই উৎকট লালসা পরিবদ্ধমান । ২ ॥ রত্ন-অন্বেষণে ক্ষিতিতল খনন করিলাম ; ধাতুর সন্ধানে গিরি-গাত্র বিদীর্ণ করিয়া দেখিলাম, সমুদ্র উলঙ্ঘন করিয়া রাজামুগ্রহ লাভের জন্য ঐকান্তিক চেষ্টা পাইলাম ; পূজামস্ত্রে অন্তর পূর্ণ করিয়া হোমাগ্নি-পাশ্বে রাত্রি অতিবাহিড কবিলাম ; কিন্তু হে কামনা –তোমার তৃপ্তিসাধন পক্ষে কপর্দক-কণাও প্রাপ্ত হইলাম না ! ৩। কুরমনা ধনবানগণের দ্বারে ক্রীতদাসের ন্যায় দিনযাপন করিলাম ; তাহাদের জঘন্ত আচরণ এবং কটু কাটব্য অবহেলায় সহ করিলাম ; মৰ্ম্মম্ভদ যাতনায় অন্তর-বিনিঃস্থত অশ্রুধারা লুকাইয়। রাখিয়া কাষ্ঠহাসি হাসিয়া আনন্দ প্রকাশ করিলাম ; ধনৈশ্বৰ্য্য-প্রমত্ত কলুষিত-চিত্ত দুরাত্মার প্রতি সম্মানের একশেষ প্রদর্শন করিলাম ; কিন্তু হে চির-অতৃপ্ত কামনা !—তোমার তৃপ্তির পক্ষে কিছুই করিতে পারিলাম না ! ৪ ॥ পদ্মপত্রস্থিত জলবিম্ববৎ এই যে ক্ষণভঙ্গুর প্রাণ, ইহার জন্য বিবেককে বলিদান দিয়া কি না অপকৰ্ম্ম করিলাম ! ধনগৰ্ব্বে গৰ্ব্বিত ধনীর সমক্ষে আত্ম-প্রাধান্ত খাপনের জন্য নিল জ্জের দ্যায় আত্মহত্যা-তুল্য কি আত্মপ্রশংসাই না করিলাম ! ৫ ৷ ক্ষমা করিয়াছি বটে ; কিন্তু ক্ষমার জন্ত ক্ষমা করি নাই ; অন্যায়াচরণের প্রতিকার পক্ষে অসামর্থ্য হেতুই ক্ষমা করিয়াছি। গার্হস্থ্য সুখ পরিবর্জন করিয়াছি বটে ; কিন্তু সম্ভোগ্রান্তে সন্তোষের সহিত নহে,—শুধুই ধন অন্বেষণে ! শীত, গ্রীষ্ম, বাতাতপ সহ্য করিয়াছি বটে ; কিন্তু ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্মের বিধি-নিয়ম পালনের জন্ত নহে। অর্থের অনুসন্ধানে দিবারাত্রি প্রাণসমর্পণ করিয়া ফিরিয়াছি বটে ; কিন্তু মহাদেবের চরণে কখনও আত্ম-সমৰ্পণ করিতে পারি নাই। ৬ ॥ পার্থিব সুখভোগ হইল না বটে ; কিন্তু ভোগের অবধি নাই। ধৰ্ম্মানুষ্ঠানে তপশ্চারণ করিলাম না বটে ; কিন্তু উদ্বেগে দুঃথে প্রতপ্ত হইলাম। কাল গত হইল না, কাল অনন্ত ; কিন্তু আমি গত হইতে (মৃত্যুমুথে পতিত হইতে ) চলিলাম ! তৃষ্ণার নিবৃত্তি হইল না ; কিন্তু আমি জীর্ণ ধ্বংস হইতে চলিলাম ! ৭ ॥ বদন বিলুলিত, মস্তক পলিতকেশ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শিথিলতা-প্রাপ্ত ; কিন্তু তৃষ্ণ দিনদিনই বৃদ্ধি পাইতেছে! ৮ ॥ যাহারা জীবনের সঙ্গী ছিল,—প্রাণপ্রিয় ছিল, তাহারা সব একে একে চলিয়া গেল ; সন্মানলাভের ক্ষমতা লোপ পাইতে চলিল, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হইয়া আসিল; শরীর যথেচ্ছচালিত হইতে অসমর্থ হইয়া পড়িল; কিন্তু কি নির্বুদ্ধিতা!— শরীর এখনও মৃত্যুভয়ে মুহমান হইতেছে! ৯ ॥ আশারাপ নদী প্রবাহে অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষারূপ অনন্ত জলস্রোত প্রবাহিত হইতেছে ; তৃষ্ণারূপ তরঙ্গে সে নদী বিচঞ্চল ; অনুরাগরূপ হিংস্র জন্তুতে সে নদী পরিপূর্ণ ; বিতর্করূপ জলচর পক্ষিগণ তাহাকে ঘেরিয়া আছে ; আর সেই তরঙ্গে তীরভঙ্গে তীরদেশস্থিত ধৈৰ্য্যরূপ তরুসকল সমূলে উৎপাটিত হইতেছে। অজ্ঞানরূপ ঘূর্ণাবৰ্ত্তহেতু এ নদীতে গতিবিধি সঙ্কট সমাকুল। নদীগর্ভ গভীরতাপূর্ণ ; উত্তর চিন্তাতট দুরবগাহ ; কেবল বিশুদ্ধ-চিত্ত যোগিগণই এই ফুস্তর নদী অনায়াসে উত্তীর্ণ হইতে সমর্থ হন । ১০ ॥ শতকের প্রতি শ্লোকই এইরূপ বৈরাগ্যভাবোদীপক তত্ত্বকথায় পরিপূর্ণ। তবে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত শতক-গ্রন্থ সমূহের পাঠ লইয়া আলোচনা করিলে বড়ইসমস্তায় পড়িতে হয়। বাঙ্গাল-দেশে একরূপ পাঠ, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে একরূপ পাঠ, দাক্ষিণাত্যে একরূপ পাঠ, বোম্বাই-প্রদেশে একরূপ পাঠ। উপরে বৈরাগ্য-শতকের যেটা