পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8obo ভারতবর্ষ। দিতে হইবে, আমরা সে মতের পোষকতা করি না । পঞ্চতন্ত্রের প্রথম অংশে করতক ও দমনকের গল্প ছিল বলিয়৷ অম্বুবাদকগণ আপন আপন গ্রন্থের ঐরূপ সংজ্ঞা নির্দেশ করিতে পারেন ; কিন্তু তাহাতে মূল গ্রন্থের নামান্তরের বিষয় কল্পনা করা যাইতে পারে না। এ বিষয়ে আমাদের একটা প্রধান যুক্তি—হিতোপদেশ রচনার ইতিহাস। হিতোপদেশও বিষ্ণু শৰ্ম্মার রচিত বলিয়া প্রতিপন্ন হয়। হিতোপদেশের রচনা সম্বন্ধে কিংবদন্তী এই যে, পাটলিপুত্রের রাজা সুদর্শন, নিৰ্ব্বোধ ও অসচ্চরিত্র কুমারদিগের শিক্ষার জন্ত, হিতোপদেশ। বিষ্ণুশৰ্ম্মাকে শিক্ষক নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কুমারদিগের চরিত্র সংশোধন ও সুশিক্ষাদান জন্য বিষ্ণুশৰ্ম্ম হিতোপদেশের ঐ নীতিমূলক অখ্যায়িকাগুলি বর্ণন করেন। পঞ্চতন্ত্র-বচয়িত বিষ্ণুশৰ্ম্ম এবং হিতোপদেশ-রচয়িতা বিষ্ণুশৰ্ম্ম অভিন্ন ব্যক্তি কি না, বলা যায় না ; তবে পঞ্চতন্ত্রের আগ্যানাংশ যে হিতোপদেশে গৃহীত হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে কোনই সংশয় নাই। হিতোপদেশ-প্রণেতা নিজেও এ কথা স্বীকার করিয়া গিয়াছেন। গ্রন্থারস্তেই লিখিত আছে,—“পঞ্চতন্ত্রান্তথান্তস্মাদগ্রন্থাদাকৃষ্ণ লিখ্যতে।” ইহ দ্বারা পঞ্চ-তন্ত্রের অস্তিত্বেব এবং তদন্তৰ্গত আখ্যান-বস্তু লইয়াই হিতোপদেশ-বচনার প্রমাণ পাওয়া যায়। অপিচ, পঞ্চতন্ত্রের ত্ৰিচত্বাবিংশ আখ্যায়িকার মধ্যে পঞ্চবিংশতি আখ্যায়িকা হিতোপদেশে গ্রহণ কবা হইয়াছে। পঞ্চতন্ত্রের প্রথম তিন তন্ত্রের অধিকাংশ উপাখ্যান এবং চতুর্থ তন্ত্রের একটা ও পঞ্চম তন্ত্রের তিনটা উপাখ্যান হিতোপদেশে সন্নিবিষ্ট আছে। হিতোপদেশ চারি ভাগে বিভক্ত,--মিত্রলাভ, সুহৃদ্ভেদ, বিগ্রহ ও সন্ধি । হিতোপদেশের প্রথম দুই অংশ–পঞ্চতন্ত্রের প্রথম দুই অংশের সহিত সম্পূর্ণ সাদৃশু-সম্পন্ন। পার্থক্য এই যে, পঞ্চতন্ত্রের প্রথম অংশ হিতোপদেশে দ্বিতীয় অংশের স্থান অধিকার করিয়াছে, এবং পঞ্চতন্ত্রের দ্বিতীয় অংশ হিতোপদেশের প্রথমাংশ মধ্যে পরিগণিত হইয়াছে। হিতোপদেশের শেষ দুই অংশে বিগ্রহ ও সন্ধি প্রসঙ্গে রাজহংসের ও ময়ূরের দ্বন্দ্ব ও মিলনের বিষয় বিবৃত আছে। যেমন পঞ্চতন্ত্র, তেমনই হিতোপদেশ—উভয় গ্রন্থই গদ্যের সহিত কবিতায় সংগ্রথিত । . পঞ্চতন্ত্রে গষ্ঠাংশের ভাগ অধিক। সে তুলনায় হিতোপদেশে কবিতার ংশ অধিক। এক একটী কবিতা স্বত্ররূপে আবৃত্তি করিয়া উদাহরণ স্বরূপ কবি এক একটা কাহিনী বিবৃত করিতেছেন। সেই এক একটী কাহিনীর মধ্যে আবার অপর কাহিনী আসিয়াও স্থান পাইয়াছে। এইরূপে কাহিনীর অবয়ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাইয়াছে। কেহ কেহ অনুমান করেন, পঞ্চতন্ত্র-রচয়িতা এবং হিতোপদেশে-প্রণেতা অভিন্ন ব্যক্তি নহেন। পঞ্চতন্ত্রের আদর্শ লইয়। পরবর্তিকালে অন্ত কোনও পণ্ডিত হিতোপদেশ সঙ্কলন করিয়া থাকিবেন । প্রণেতার নাম--তাহাতেও বিষ্ণুশৰ্ম্মাই রহিয়া গিয়াছে। সংস্কৃত-সাহিত্যের দূর অতীতের ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্ত তো থাকিবারই কথা ! বাঙ্গালা-সাহিত্যের ইতিহাসেই দেখিতে পাই,—কয়েক শত বৎসরের ব্যবধানে একের রচনা অন্যের দ্বারা রূপান্তরিত হইয়া পূৰ্ব্ব-রচয়িতার নামেই চলিয়া আসিয়াছে। কৃত্তিবাস যে রামায়ণ রচনা করিয়া যান, তাহার সে আদি-রচনা এখন লোপ পাইয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না ; কিন্তু তাহার রচনার অনুসরণে প্রায় অৰ্দ্ধ-শতাব্দী অতীত হইল পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার যে রামায়ণ লিথিয়া যান, তাহাই এখন