পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । 8、○ ধৰ্ম্মের সহিত-নীতির সহিত সংস্রব রাখিয়া কবিতা রচনা করিয়া গিয়াছেন বলিয়াই ভারতের অনেক কবি অমর হইয়া আছেন। খণ্ড-কাবা, মহাকাব্য প্রভৃতির আলোচনায় শঙ্করাচার্ষা । পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব প্রসঙ্গে যাহাঁদের নাম উল্লেখ করিয়াছি, যে বিষয়েই র্তাহারা মে:, কবিতা রচনা করিয়াছেন, অসাধারণ প্রতিভা-প্রভাবে সেই বিষয়েই তাহার চির-যশস্বী হইয়া আছেন । কিন্তু তাহীদের সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্মপ্রাণতার জন্ত —নীতিপরায়ণতার জন্য মারও অসংখ্য কবি যে অমর হইয়া থাকিবেন, তদ্বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। খণ্ড-কাব্য রচনায় কৃতিত্ব-প্রদর্শন প্রসঙ্গে পূৰ্ব্বে ভস্তৃহরির নাম উল্লেখ করিয়াছি। র্তাহার সঙ্গে সঙ্গে, তাতার অধিক প্রতিভাসম্পন্ন আর এক মহাপুরুষের নাম খণ্ড-কাব্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাইতে পারে। সে মহাপুরুষ—শ্ৰীশ্ৰীশঙ্করাচার্য্য। তিনি যেমন দর্শনশাস্ত্রালোচনায় অলৌকিক প্রতিভা প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন, তত্বকথামূলক খণ্ড-কবিতা রচনায়ও তাহার সেইরূপ অসাধারণ শক্তি প্রকাশ পাইয়াছে। ভঙুহরি ষে সুরে যে গান গাড়িয়াছিলেন, সে বিবেক-বৈরাগ্য-মূলক সঙ্গীতে শঙ্করাচার্য্যের সমকক্ষ বোধ হয় দ্বিতীয় দৃষ্ট হয় না। র্তাহার মোহমুদগর—সংসার-মোহ-নাশের অমোঘ অস্ত্র-স্বরূপ। ভর্তৃঙ্গরির বৈধাগ্যশতকে যে ভাব অঞ্জরিত মুকুলিত, মোহমুদগরে তাহ পূর্ণ প্রস্ফুটিত। ভর্তৃক্টরি স্ত্রীর প্রতি বিরাগ-বশতঃ বলিয়াছিলেন,– তাহার কথা স্মরণ করিতেও হৃদয় যাতনায় অস্থির হয় ; তাহার দর্শনে উন্মত্ত তা বৃদ্ধি পায় ; তাহার স্পর্শে জ্ঞান লোপপ্রাপ্ত হয়। জানি-ন, কেমন করিয়া তাহাব প্রতি ভালবাসা আসে ? কিন্তু শঙ্করাচাৰ্য্য কহিলেন,~—‘কেই বা স্ত্রী, কেই বা পুত্র –এ সংসারে কেহ তোমার আপনার নয় ! এই বুঝিয়া তত্ত্ব-চিন্তায় রত হও । ভ হরি স্ত্রীর ব্যবহারে বিরক্ত হইয়া বৈরাগ্য অবলম্বন করিয়াছিলেন ; শঙ্করাচাৰ্য্য সংসারের আত্মীয়-স্বজনের ব্যবহারে ব্যথিত হইয়া, ঐ বৈরাগ্য-বাণী ঘোষণা করিয়া গিয়াছেন। তাহার আত্মীয়-স্বজন তাঙ্গার প্রতি কি দুৰ্ব্ব্যবহারই না করিয়াছিলেন । দায়াদগণের চক্রান্তে সৰ্ব্বস্বাস্তু হইয়া শঙ্করাচার্য্যকে গৃহত্যাগী হইতে হয়। সংসারে একমাত্র জননী তাছার আশাপথ চাহিয়া দিনযাপন করিতেছিলেন। সহসা জননী পীড়িত হইলেন । প্রতিবেশিগণ আত্মীয়-স্বজনগণ কেহই চাহিয়া দেখিলেন না । জননীর মৃত্যুর অব্যবহিত পূৰ্ব্বে, কি জানি প্রাণ কেমন করিয়া উঠিয়াছিল ; তাই শঙ্করাচাৰ্য্য গৃহে ফিরিয়া আসেন। গৃহে প্রত্যাবৃত্ত হইয় যে বৃগু অবলোকন করেন, তাহাতে প্রাণে মৰ্ম্মম্ভদ যাতনা অনুভূত হয়। জননী একাকিনী আসন্নমুচ্যুশয্যাশায়িনী !—নিকটে গণ্ডুষ-জল-প্রদানের কেহই নাই। আত্মীয়গণ দুর হইতে উপেক্ষার হাসি হাসিতেছেন। এইরূপ অবস্থায় পুত্রের ক্রোড়ে মস্তক রাখিয়া শঙ্কর-জননী লোকাস্তুর-গামিনী হইলেন। ক্ষোভে, বিষাঙ্গে, বিষম আত্মপ্লানিতে শঙ্করের হৃদয় সন্তপ্ত হইল। অসহয়ে একাকী আপন গৃহ-প্রাঙ্গণে তিনি জননীর সৎকার-কাৰ্য্য সমাপন করিলেন । তার পর সাশ্রনয়নে জননী জন্মভূমির নিকট চিরতরে বিদায় লইলেন। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি বিরক্তি-বশতঃ নছে ;–কিসে জীবের অজ্ঞানান্ধকার দূর করিতে পারেন, কিসে মানুষের আত্মপর-ভেদ জ্ঞানের অবসান হয়,--তাহারই উপায় অমুসন্ধানে শঙ্কর সংসার ত্যাগ করিলেন। যে সময়ে এই বৈরাগ্য উপস্থিত হয়, সেই সময়ই তিনি মোহমুদগর