পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ම්)” ভারতবর্ষ। দর্পণ অধুনা বিশেষভাব প্রচলিত। এখন সাধারণতঃ অলঙ্কার-শাস্ত্রের দৃষ্টান্তে সাহিত্যদর্পণের নামই উল্লিখিত হইয়া থাকে। কিন্তু চারি শত বৎসর পূৰ্ব্বে এ দেশে কাবাপ্রকাশেরই প্রাধান্ত অপ্রতিহত ছিল। তখন কাব্য-প্রকাশ অধ্যাপনার জন্ত চতুষ্পাঠী ছিল এবং শ্রীচৈতন্যদেব প্রমুখ মনীষিগণ কাব্যপ্রকাশ পাঠে প্রীতিলাভ করিয়াছিলেন । কাব্যপ্রকাশের একটা শ্লোক খ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রায়ই আবৃত্তি করিতেন এবং সে র্তাহার প্রাণের সামগ্রী ছিল। তাহার জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন সেই শ্লোকটতে পরিদৃপ্তমান ! শ্লোকটা এই— “যঃ কৌমারহরং স এব হি বরস্তা এব চৈত্রক্ষপাঃ । তে চোল্মীলিত-মালতী-সুরভয়ঃ প্রৌঢ়াঃ কাদম্বানিলাঃ ॥ সা চৈবাৰ্ম্মি তথাপি তত্র সুরতব্যাপারলীলাবিধেী । * রেবারোধসি বেতসীতরুতলে চেতঃ সমুৎকণ্ঠতে।” এই শ্লোকে প্রেমময়ের প্রেমের বিষয় পরিবর্ণিত হইয়াছে। সেই তিনি, সেই প্রেমিক পুরুষ বিস্তমান রহিয়াছেন ; সেই প্ৰাণেশ্বর মূৰ্ত্তিমান আছেন, সেই চৈত্ররজনী উপস্থিত হইয়াছে, সেই প্রস্ফুট মালতীর সৌরভ বহন করিয়া গন্ধবহ মন্দ মন্দ প্রবাহিত হইতেছে ; আমিও সেই রহিয়াছি ; তবে কেন সেই পুৰ্ব্ব স্থানের বিষয়—সেই প্রেমরসের কথা প্রাণে কেবলই জাগিয়া উঠিতেছে ? কেন সেই বেতসতরুতলে বেবাতটে যাইবার জন্য প্রাণ আবার উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিতেছে ? এইখানে রাধাভাবের বিকাশ দেখা যায়। শ্ৰীকৃষ্ণবিরহে ত্রীরাধার যে অবস্থা হইয়াছিল, এখানে সেই ভাব প্রকটিত । শ্রীচৈতন্য রাধাভাবের ভাবুক ছিলেন, কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হইয়াছিলেন ; তাই বুঝি ঐ শ্লোকটী তাহার বড় প্রিয় ছিল। বিশ্বনাথ বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপে সৰ্ব্বত্র বিরাজমান আছেন ; তথাপি যেন প্রাণ র্তাহার সহিত মিলিত হইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া পড়িয়াছে। কোথা তিনি, কোথা প্রেমময় !—র্তাহার সন্ধানের জন্য ব্যাকুলতাই বৃদ্ধি পাইয়াছে ! তিনি সৰ্ব্বত্র সৰ্ব্বঘটে বিরাজমান বুঝিয়াও র্তাহার সহিত সন্মিলনের প্রবল আকাঙ্ক্ষাই এখানে ব্যক্ত হইতেছে । তাই শ্রীচৈতন্যদেব এই শ্লোকটকে প্রাণের সামগ্ৰী বলিয়া মনে করিতেন। কাব্য প্রকাশ এক হিসাবে দার্শনিক গ্ৰন্থ। উহার মূলে এবং ব্যাখায় বহু দৰ্শন-তত্ত্ব বিবৃত হইয়াছে। উহার প্রথম শ্লোকে বলা হইয়াছে,—কবি অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন । তাহার প্রতিভ-প্রভাবে অঘটন সংঘটন হয় । ব্রহ্মার স্বষ্টি বরং নিয়তি-নিয়ন্ত্রিত ; কিন্তু কবির সৃষ্টি স্বভাবসঙ্গত। ব্ৰহ্মার স্থষ্টি কৰ্ম্মজনিত অদৃষ্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু কবির কল্পনা যথেচ্ছ বিচরণ করিতে সমর্থ। এই মৰ্ম্মে গ্রন্থকার কবির জয় ঘোষণা করিয়াছেন,— “নিয়তিকৃতনিয়মরহিতাং হলাদৈকমীমনন্যপরতন্ত্রাম্ নবরসরুচিরাং নিৰ্ম্মিতিমাদধতী ভারতী কবের্জয়তি ।” কেহ কেহ বলেন, অলঙ্কার-শাস্ত্র প্রণেতা মন্মটাচার্য্যের প্রকৃত নাম-মহিম ভট্ট । কাব্যপ্রকাশ ভিন্ন তিনি শব্দব্যাপারবিচার, কাব্যামৃততরঙ্গিণী, সঙ্গীতরত্নমালা প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। বামন ও রঘুনাথ প্রমুখ অলঙ্কারশাস্ত্রবিদগণ যে মত প্রচার করিয়া যান, মৰ্ম্মট সে মতের প্রতিবাদ করিয়া অভিনব মত প্রচারের চেষ্টা পান। বিশ্বনাথ কবিরাজ সাহিত্য দর্পণে আবার মস্বটের মতের প্রতিবাদ করেন। সাহিত্যু দৰ্পণ এখন