পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে শ্রীচৈতন্যের প্রভাব । B\ఫి সঞ্চারের দিন বলিলেও বলা যাইতে পারে। এক দিকে বাস্থদেব রঘুনাথ প্রমুখ দার্শনিকগণের আবির্ভাবে দৰ্শন-শাস্ত্র আলোচনায় যুগান্তর আনয়ন করিয়াছিল ; অন্ত দিকে স্মাৰ্ত্ত রঘুনন্দন স্মৃতিশাস্ত্ৰ-মূলে হিন্দুসমাজের বিরাট দেহ আবদ্ধ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন ; আর এক দিকে জীবের গতিমুক্তির সরল সুগম পথ প্রদর্শন করিয়া দিয়া ঐচৈতন্তদেব নবধৰ্ম্মের বিজয়-বৈজয়ন্তী উডঙীন করিয়াছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্ন দিক হইতে পরিপুষ্ট হইয়াছিল। এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করিবার বিষয়,—দর্শন স্মৃতি প্রভৃতির উন্মেষণ ;–এই সময়ের সাহিত্যে লক্ষ্য করিবার বিষয়,-বৈষ্ণৰ-ধৰ্ম্মের চিত্তবিমোহন চিত্র –বঙ্গের গৌরবের এক অভিনব স্তর। জন্ম-জরা-মুত্যুর আধি-ব্যাধি-শোক-তাপে সংসার মুহমান। তাপতপ্ত জীবের আকুল ক্রনীনে গগন প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হইতেছে। সুখ কোথায়, শাস্তি কোথায়, এ দুঃখের অবসান হয় কি প্রকারে ?—পশুপক্ষিকীটপতঙ্গ হইতে সংসারের সকলেই সেই অমুসন্ধানে বিব্রত রহিয়াছে । জীব মাত্রেরই লক্ষ্য এক,–কিসে দুঃখ দূর হয়, কিসে মুখসাধন সম্ভবপর ! এ ভিন্ন সংসারে আর অন্ত চিন্তা নাই। এই একই লক্ষ্যে অনন্ত কোট প্রাণী উল্লাস্তের ন্যায় পরিভ্রমণ করিয়া বেড়াইতেছে। কিন্তু কেহই পথ খুজিয়া পাইতেছে না। পরীক্ষা-পারবারে নিমজ্জমান হইয়া, আশা-নৈরাষ্ঠের ঘাত-প্রতিঘাতে পড়িয়া, কত অবাস্তব কল্পনা বাস্তবরূপে পরিণত হইতেছে ;–কত বাস্তব সামগ্ৰী অবাস্তব মধ্যে পরিগণিত হইতে চলিয়াছে। আস্তিক, নাস্তিক, দ্বৈতবাদী, অদ্বৈতবাদী—অসংখ্য ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায় আশা-নৈরাপ্তের ভীষণ কোলাহল তুলিয়া, সকলকে উদভ্ৰান্ত করিয়া তুলিয়াছে। সংসারের এই সঙ্কটসস্কুল অবস্থায়, নৈরাপ্তের ভীষণ আৰ্ত্তনাদের মধ্যে, আশার অভয়-বাণী জীমূত-মন্দ্রে ধ্বনিত হইল,—“ভয় নাই! পাপী তাপী যে যেখানে আছে, আশ্বস্ত হও । ঐ দেখ, সম্মুখে গতিমুক্তির সরল সুগম পথ —হরেনাম হরেনাম হরেনামৈব কেবলম্ব।” কলিপাবন মহাপ্ৰভু জীবের গতিমুক্তির এই অভিনব পথ প্রদর্শন করিলেন। নাম-সঙ্কীৰ্ত্তন রূপ সরল স্বগম পথ প্রদর্শিত হইল। নাম-সঙ্কীর্তনে মুক্তিলাভ হইবে, ইহার অধিক সরল শিক্ষা আর কি থাকিতে পারে ? দয়াল প্রভু, জীবের যন্ত্রণায় যন্ত্রণা অনুভব করিয়া, করুণার এই স্বচ্ছ সুশীতল অনন্ত নিঝর উন্মুক্ত করিয়া দিলেন ; আচণ্ডাল সকলকে সম্বোধন করিয়া কছিলেন – "এস ভাই, পাপী তাপী যে যেখানে শুষ্ককণ্ঠ তৃষাৰ্ত্ত আছ, এই নাম-পীযুষ পান করিয়া শাস্তি লাভ কর।” সাহিত্যে এক নুতন ভাব-প্রবাহ প্রবাহিত হইল ;–দর্শন-শাস্ত্র এক অভিনব পন্থ পরিগ্রহ করিল –স্থতিশাস্ত্ৰ-মূলে নব নব অঙ্কুর উদগত হইতে লাগিল । কত কবি, কত দার্শনিক, কত নাট্যকারের আবির্ভাব হইল —বাগোৰী বীণাপাণি নান রয়ালঙ্কারে বিভূষিত হইলেন। সাহিত্যের এই নবজীবনের প্রবর্ভূক—গ্রচৈতন্তৰে। আপন ধৰ্ম্মমত প্রচারের জন্ত স্ত্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং কোনও গ্রন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন বলিয়া কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না বটে ; কিন্তু তিনি যে সকল শ্লোক ও গুণাবলী উচ্চারণ করতেন, তাহার কতকগুলি তাঁহারই রচনা বলিয়া প্রতীত হয় । ভাবরাজ্যের