পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३. ভারতবর্ষ। বিচ্ছিন্ন উপাদান কোথায় কি পাওয়া যায়, ই একটা দৃষ্টাস্তের উল্লেখ করিতেছি। ভারতে কোনও পরিচয়-চিহ্ন নাই ; কিন্তু চীন-দেশের অতি প্রাচীন কালের ইতিহাসে লিখিত আছে,-চীন-সম্রাট টে-মুং, তিব্বতীয়গণের সহিত যুদ্ধে ভারতবর্ষের নিকট গৌরব-গাখী । সৈন্য-সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন ; কুমার নামধেয় পূৰ্ব্ব-ভারতের এক নৃপতি আর এক সময়ে চীনাদিগকে যুদ্ধে সহায়তা করেন, তারতবর্ষ পাচ বিভাগে বিভক্ত ছিল এবং ভারতবর্ষ হইতে চীন-সম্রাটের দরবারে রাজদূতগণ গতিবিধি করিতেন ও চীন-সম্রাটের দূতগণও ভারতের রাজদরবারে আসিয়া উপঢৌকনাদি প্রদান করিতেন — এ সকল বিবরণ চীনের ইতিহাসেই দেখিতে পাই ; * কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এ সকল বিষয় লিখিত নাই। খৃষ্টজন্মের পূর্ববৰ্ত্তিকাল হইতে মুসলমানগণের ভারত-প্রবেশের অব্যবহিত পুৰ্ব্ব পর্য্যস্ত বৈদেশিকগণের সহিত ভারতের সম্বন্ধ-সংশ্রবের এবং তাহাতে ভারতবর্ষের প্রভাবের এইরূপ আরও বিবিধ পরিচয় বৈদেশিকগণের ইতিহাসেই দেখিতে পাই। পারস্তের ইতিহাসে এবং গ্রীদদেশীয় ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের বর্ণনায় প্রতিপন্ন হয়, গ্রীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-যাত্রায় পারস্ত-সম্রাট জারাক্সেস ভারতবর্ষ হইতে সৈন্তদলের সাহায্য গ্রহণ করিয়াছিলেন । এ ঘটনা খৃষ্ট-জন্মের ৪৮• বৎসর পূৰ্ব্বে সংঘটিত হইয়াছিল। সুতরাং ভারতের ইতিহাস নাই বলিয়৷ প্রাচীন ভারতের সভ্যতার স্মৃতি মুছিয়া ফেলিবার উপায় দেখি না । প্রাচ্যে যেমন চীনের সহিত ভারতের বাণিজ্য-সম্বন্ধের পরিচয় পাই, পাশ্চাত্যে রোম-সাম্রাজ্যের সহিত তারতের সেইরূপ সম্বন্ধের বিবরণই প্রাপ্ত হই । রোম-সাম্রাজ্য যখন উন্নতির উচ্চ-চুড়ার সমান্ধঢ়, সেই সময়ে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক প্লিনি দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন,—বাণিজ্য-ব্যাপারে রোমের কত অর্থই ভারতের উদর পূরণে শোষণ হইতেছে! + অর্থাৎ, এখন যেমন বিদেশী বণিকগণ ভারতের অর্থ শোষণ করিতেছেন বলিয়া রব উঠে, এক সময়ে ভারতের সম্বন্ধে রোম-সামাজ্যে সেইরূপ চীৎকারধ্বনি শুনিতে পাওয়া গিয়াছিল। ভারতবর্ষের বাণিজ্যের প্রভাব এইরূপ দুই একটা দৃষ্টাস্তে বেশ উপলব্ধি হয়। ভারতের ইতিহাসে এ পরিচয় খুজিয়া পাই না ; কিন্তু পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকগণের গ্রন্থপত্রে এ নিদর্শন আজিও লোপ পায় নাই। এইরূপ, পারস্তে, আরবে, গ্রীসে, মিশরে, এমন কি নূতন মহাদেশ বলিয়া পরিচিত মুদুর আমেরিকায় পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন-ভাবে ভারতের এ সকল পরিচয় দেদীপ্যমান রহিয়াছে। সুতরাং সেই দূর অতীতের ধারাবাহিক ইতিহাস সংগৃহীত নাই হউক, বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত ভারতের গৌরবগাথা সংগৃহীত হইলেও প্রাচীন:ভারতের প্রতিষ্ঠার বিষয় বেশ উপলব্ধি হইতে পারে । আধুনিক ঐতিহাসিকগণ ইতিহাসের চারিট স্তর নির্দেশ করিয়া থাকেন। তদনুসারে, প্রথম স্তর উপাখ্যান-মূলক। সে স্তরের সকলই অপ্রামাণ্য–উপকথায় পূর্ণ ; দ্বিতীয় স্তর— অৰ্দ্ধ-ঐতিহাসিক ; ঐ স্তরের ঐতিহাসিক উপাদানসমূহের অধিকাংশই ༧་་ནས་་་་།། কাল্পনিক ; তবে কতকগুলি সমসাময়িক কীৰ্ত্তি-স্মৃতি দ্বারা উহার কিছু কিছু অস্তিত্ব সপ্রমাণ হয়। তৃতীয় স্তর—ঐতিহাসিক স্তর বটে ; তবে উহার মধ্যেও কতক অসত্য মিশিয়া আছে এবং উহা একদেশদর্শিতা-দোষদুষ্ট । চতুর্থ স্তর—অর্থাৎ বর্তমান কালের প্রমাণ পরম্পর-সমম্বিত যে ইতিহাস, উহাই প্রকৃত ইতিহাস নামে অভিহিত হইবার