পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৮৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বঙ্গের গোঁৱব-বিভব । ३3* গুনে অবিরত, পুরাণ ভারত, দ্বিজে দেই হেমানে ॥ উজানীর কথা, গড় চারি ভিতা, চৌদিকে বেউড় বঁাশ । রাজার সামন্ত, নাহি পায় অস্ত, যদি ফিরে চারি মাস ॥ ভিতে বাস গাঢ়, পাথরের গড়, কাঙ্কর পুরট শোভা । পাথরে খিচনী, যেন দিনমণি, চারিদিকে করে শোভা । নগরের নারী, ইন্দ্র বিদ্যাধরী, ভূষণ-ভূষিত গা । যতেক পুরুষ, মনোহর বেশ, পীড়য়ে বসন্ত বা ॥ বিক্রমকেশরী, র্তাহার নগরী, আছে কত সদাগর । তাহার আদেশে, ধনপতি বৈসে, যারে সুখী নৃপবর ॥” এই বর্ণনায় গড়-পরিখা-বেষ্টিত বিশাল রাজধানীর যে চিত্র দেখিতে পাই, সে নগর এখন কোথায় ? চারি মাস পরিভ্রমণ করিলেও যে নগরের অন্ত মিলিত না, যে নগরে কত্ত সদাগর বাণিজ্য-ব্যপদেশে সৰ্ব্বদা গতিবিধি করিত, সে নগর এখন কোথায় ? কেবল এক কবিকঙ্কণে নহে,—ক্ষেমানন্দ কেতকাদাসের ‘মনসার ভাসানে উজানী-নগরের সমৃদ্ধির পরিচয় প্রাপ্ত হই ; বংশীদাস-কৃত ‘পদ্মাপুরাণে উজানীর সমৃদ্ধির বিষয় পরিবর্ণিত আছে ; বিজয়গুপ্তের ‘মনস-মঙ্গলে’, নারায়ণদেবের ‘পদ্মাপুরাণে, উজানীর প্রসঙ্গ উখাপিত হইয়াছে। বাঙ্গালার বিভিন্ন সময়ের প্রসিদ্ধ কবিগণ যে নগবের সমৃদ্ধির বিষয় পুনঃপুনঃ উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সে নগর এখন কোথায় ? এই উজানী-নগরের প্রসঙ্গে কত কথাই মনে আসে। যে বিক্রমকেশরী বিক্রমাদিত্যের নাম বিশ্ববিখ্যাত, তিনি উজ্জয়িনীর অধীশ্বর ছিলেন বলিয়া অভিহিত হন। এই উজানীর পূর্ব-সমৃদ্ধির বিষয় স্মরণ করিলে, এই উজানীকেই উজ্জয়িনী বলিয়া মনে করিতে পারি না কি ? পুথিতে উজয়মী পাঠও দৃষ্ট হয়। উজানী, উজয়নী, উজ্জয়িনী—অভিন্ন হওয়া সম্ভব নহে কি ? কিন্তু যাউক সে কথা । এখন, উজানী কোথায় ছিল, সন্ধান করিয়া দেখুন দেখি ! বৰ্দ্ধমান-জেলায় কাটোয়া-মহকুমায় উজানী-নগব অবস্থিত ছিল । এক্ষণে মঙ্গলকোট-থানার পাশ্ববৰ্ত্তী পল্লীসমূহ উজানীর ক্ষীণ স্মৃতি রক্ষা করিতেছে মাত্র। এখন উজান বলিলে বড় কেহ চিনিতে পারেন না ; মঙ্গলকোটই এখন উজানীর স্থান অধিকার করিয়া আছে । মঙ্গলকোটে উজানীর দুর্গ ছিল বলিয়া সিদ্ধান্ত হয়। গৌড়ের সমৃদ্ধির দিনেও উজানীর কিছু কিছু গৌরব ছিল। ক্রমে মুসলমানগণের প্রাচুর্ভাবে উজানীর নাম পৰ্য্যস্ত লোপ পায় । “চৈতন্যমঙ্গল’-রচয়িতা লোচনদাস এই উজানী-নগরে জন্মগ্রহণ করেন। উজানী—পীঠস্থান ও তীর্থ-ক্ষেত্র । উজানীতে দেবীর কক্সই পড়িয়াছিল । উজানীর স্থান অধিকার করার মঙ্গলকোট এখন সেই তীর্থ-স্থানে পরিণত হইয়াছে। এই উজানীর বণিক ধনপতি সদাগরের প্রসঙ্গে বঙ্গের আরও ৰন্থ প্রাচীন বাণিজ্য-স্থানের পরিচয় পাই । ধনপতির পিতৃশ্ৰাদ্ধ উপলক্ষে নানাস্থানের বণিকগণ আমন্ত্রিত হইয়াছিলেন। সেই সকল স্থামের বিষয় আলোচনা করিলেও বাঙ্গালার বহু বাণিজ্য-কেন্দ্রের নিদর্শন পাই । কবিকঙ্কণ লিৰিয়ছেন,—“বৰ্দ্ধমান হইতে বেণে গাইলে খুলদত্ত। বোলশো বেণের মাকে যাহার মহৰ।"