পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৯০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&86" ভারতবর্ষ । ইহার পর, ১৬০৪ খৃষ্টাব্দে, কেদার রায়ের বিরুদ্ধে মানসিংহের বিপুল বাহিনী প্রেরিত হয়। পাচ শত সুসজ্জিত রণতরী সহ কেদার রায় এই যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। মোগল-সেনাপতি কিলমাকৃ শ্ৰীনগরে কেদার রায় কর্তৃক আক্রান্ত হন । বিজয়লক্ষ্মী এবারও কেদার রায়ের পক্ষ গ্রহণ করিবেন বলিয়া প্রথমে মনে হইয়াছিল। কিন্তু পরক্ষণে, ঘন ঘন কণমান গৰ্জ্জনের মধ্যে, জয়-পরাজয়ের গতি পরিবর্তিত হইল ; কেদার রায় শক্রহস্তে বন্দী হইলেন । বন্দী অবস্থায় মানসিংহের নিকটে তাহাকে উপস্থিত করা হইয়াছিল। কিন্তু যুদ্ধের অস্ত্রাঘাত-জনিত ক্ষতে অল্পক্ষণ পরেই তাহার প্রাণবায়ু বহির্গত হয় । কেদার রায়ের পর প্রতাপাদিত্যের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রতাপাদিত্য বহু যুদ্ধেই মোগল-সৈন্যকে পর্যুদস্ত করিয়াছিলেন । তাহার বীরত্ব-খ্যাতির নিকট গেীভূ-রাজধানীর যশ পরিমান হইয়াছিল। গৌড়ের যশ অপহরণ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন বলিয়া, র্তাহার রাজধানী যশোহর’ সংজ্ঞা লাভ করে । প্রতাপাদিত্যের জীবন ঘটনা-বৈচিত্র্য-পূর্ণ। তাহার পিতা বিক্রমাদিত্য, বাঙ্গালার স্থলতান স্থলেমান সাহের ও দায়ুদ খাঁর প্রিয়পাত্র ছিলেন। বর্তমান যশোহর-জেলার দক্ষিণে, এখন যে প্রদেশ সুন্দরবন মধ্যে পরিগণিত—বিক্রমাদিত্য সেই প্রদেশে গিয়া রাজত্ব স্থাপন করিয়াছিলেন । পিতা বিক্রমাদিত্য স্বাধীনরাজ-মধ্যে গণ্য হন,—প্ৰতাপের যনে বাল্যকাল হইতে এই বাসনা জাগরুক হয় । বিক্রমাদিত্য কিন্তু সে ভাব অন্তরে পোষণ করিতেস না । সামন্ত্রভৌমিকরাঙ্গ-মধ্যে পরিগণিত থাকিতে পাইলেই তিনি প্রীত ছিলেন । সেইজন্য, মোগলগণের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রদর্শন করাইবার উদ্দেশ্যে, পুত্র প্রতাপাদিত্যকে তিনি আগ্রায় ও দিল্লীতে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাহাতে হিতে বিপরীত ফল হয় । মোগল-সৈন্সের আভ্যন্তরীণ অবস্থা বুঝিতে পারিয়া, প্রতাপাদিত্য স্বাধীন-রাজ্য-স্থাপনে কৃত-সঙ্কল্প হন । দিল্লী ও আগ্রা হইতে প্রত্যাবর্তনের পর, প্রতাপাদিত্য গৌড়ের গৌরব নষ্ট করিবার চেষ্টা পান । তখন আর তিনি মুসলমানগণকে মওলাধিপতি রাজা বলিয়া গ্রাহ করেন না। বঙ্গের শাসন-ভার প্রাপ্ত হইয়া, প্রতাপাদিত্যকে দমন জন্য, তাই মানসিংহ বড়ই চঞ্চল হইয় পড়েন। সৈন্যদলপ্রেরণে প্রতাপকে পরাভূত করিতে না পারিয়া, পরিশেষে মানসিংহ নিজেই প্রতাপাদিত্যদমনে অগ্রসর হন। যুদ্ধে প্রথমে মানসিংহের পরাজয় হয়। তখন, মানসিংহ গৃহ-শত্রুর সন্ধানে ষড়যন্ত্রে প্রবৃত্ত হন । পিতৃব্য বসন্তরায়কে হত্য করার জন্য পিতৃব্য-পুত্র কচু রায় প্রতাপের ৰিব্রুদ্ধে প্রতিহিংসানল প্ৰজলিত করিয়া রাখিয়াছিলেন । সেই প্রতিহিংসামলে মানসিংহের অভিযান-রূপ ঘৃতাহুতি প্রদত্ত হইল। কচু রায় মড়যন্ত্র করিয়া প্রতাপাদিত্যকে শত্ৰু-হস্তে বন্দী করাইলেন। প্রতাপের স্বাধীন-রাজ্য-প্রতিষ্ঠার আশামূল আয়ুরে উচ্ছিন্ন হইল। দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ স্থান প্রতাপের বগুত। স্বীকার করিয়াছিল। তিনি বিভিন্নস্থানে রণপোত-নিৰ্ম্মাণের কেজসমূহ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। চওঁীখান বা সাগর-দ্বীপে তাহার প্রধান পোতাধিষ্ট-স্থান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল ; ক্ষুধালী, জাহাজঘাট, চাকঐ প্রভৃতি বন্দরে তাহার পোত-সমূহ নিৰ্ম্মিত হইত। দেশে-বিদেশে আধিপত্য-বিস্তারের জন্য তিনি সমুদ্রপথে জলযুদ্ধের উপযোগী অর্ণবপোত-সমূহ প্রভত রাৰিয়াছিলেন। কিন্তু বিধাতা প্রতাপাদিত্য ।