পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - তৃতীয় খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাষা ও ভাস্কৰ্য্য । , RSł ফা-হিয়ানের প্রায় দুই শত বৎসর পরে পরিব্রাজক হুয়েন-সাং ভারত-ভ্ৰমণে আগমন করেন। সে সময়ে মৌৰ্য-রাজধানী পাটলিপুত্র ধ্বংসমুখে নিপতিত, জনমানবহীন—মরু-সদৃশ পরিাত্যক্ত'। তাহার চিহ্ন পৰ্য্যন্ত তখন বিদ্যমান ছিল না। সে অত্ৰভেদী প্রাসাদ চুড়া, সে অশেষ জাকজমকপূর্ণ চিত্ৰ-বিচিত্র রাজপ্রাসাদ, তখন গঙ্গা ও শোিণ নদীর বালুকগর্ভে নিমজ্জিত । পাটলিপুত্রের এই উত্থান-পতনের-তাহার এই গৌরব-পদািখলনের কারণ কি ? সে উত্থানপতন-সে গৌরব-পদািখলনের মধ্যেও সেই একই শক্তির বিচিত্ৰ লীলা পরিলক্ষিত হয় না কি ? অন্ধকারের পর আলোক, আলোকের পর অন্ধকার,-ইহা যেমন প্ৰকৃতির বিচিত্ৰ লীলা,- বিশ্বনিয়ন্তার বিচিত্ৰ-বিধান ; পতনে ও অত্যুত্থানেও সেই বিচিত্র শক্তির বিচিত্র লীলাই প্রত্যক্ষীভূত হয়। চন্দ্রগুপ্তের বিপুল আয়াসের ফলে মগধ-সাম্রাজ্যে মৌৰ্য্য-রাজগণের প্রতিষ্ঠা হয় | তাহার লোকান্তরের পর তৎপৌত্র অশোকের রাজত্বকালে সে প্রতিষ্ঠা আশেষ পরিমাণে বৃদ্ধি-প্ৰাপ্ত হইয়াছিল। তখন কেহ কি মনে করিতে পারিয়াছিল, সে প্রতিষ্ঠার এইরূপ পরিণতি সংঘটিত হইবে ? তবে কেন এমন হইল ? বলিয়াছি তো-ইহাও সেই বিচিত্র শক্তির বিচিত্ৰ লীলা ; বলিয়াছি তো-সে। ইতিহাসও ধৰ্ম্মের ইতিহাস ! ভারতের সকল কালের সকল যুগের ইতিহাসই ধৰ্ম্মের সহিত সংশ্ৰবযুক্ত। ধৰ্ম্মের পতনের ও ধৰ্ম্মের অভু্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে সে ইতিহাসেরও পতন এবং অভু্যত্থান অবশ্যম্ভাবী। রাজচক্ৰবৰ্ত্তী চন্দ্রগুপ্তের হৃদয়ে জৈনধৰ্ম্মের যে উন্মাদনা অনুঃপ্রবিষ্ট হইয়াছিল, তাহারই ফলে তিনি সাম্রাজ্য-প্ৰতিষ্ঠায় সমর্থ হইয়াছিলেন । ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠায়ই র্তাহার প্রতিষ্ঠা । তাহার পুত্র বিন্দুসারও পিতৃপদাঙ্ক অনুসরণে পিতৃকীৰ্ত্তি অক্ষুন্ন রাখিয়াছিলেন । তাই তঁাহার রাজত্বকালেণ্ড মৌৰ্য্য-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার লাঘব হয় নাই। কিন্তু রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোকের ধৰ্ম্মানুরাগিতার ফলে সে প্রতিষ্ঠা আশেষ পরিমাণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল। তিনি ধৰ্ম্মের সাধনায় ব্ৰতী হইয়া জীবহিতসাধনের যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহার তুলনা হয় না। ধর্মের গ্লানি-নিবারণে ধৰ্ম্ম-সংস্থাপনে তিনি অনুপ্ৰাণিত হইয়াছিলেন বলিয়াই তঁহার কীৰ্ত্তি-স্থতি চিরবিদ্যমান রহিয়াছে। অশোকের বংশধরগণ পিতৃপিতামহের পদাঙ্ক অনুসরণে তাদৃশ্য ধৰ্ম্মভাবে অনুপ্রাণিত হইতে পারেন নাই। তাই তঁহাদের পতন সঙ্ঘটিত হইল। পতনের ও অত্যুত্থানের ইতিবৃত্তে ধৰ্ম্মশক্তির এই বিচিত্র ক্রিয়া সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। রাজচক্ৰবৰ্ত্তী অশোকের লিপি-সমুহে ধৰ্ম্মের সেই অপূর্ব প্রভাব সুপ্রকটত রহিয়াছে। লিপি এবং অনুশাসন ভিন্ন ভূপ-সমূহেও এই ভাব পূর্ণ প্রকটত। ‘অবদান’ গ্রন্থে অশোকের চুরশীতি সহস্ৰ সংখ্যক ভূপ নিৰ্ম্মাণের বিষয় উল্লিখিত আছে। অশোকের প্রতিষ্ঠিত বিহার ও মন্দির সমূহ সকলই কালের কারাল গ্রাসে নিপতিত অপ। হইয়াছে; কিন্তু ভূপ-সমূহের অধিকাংশ অনেকাংশে অক্ষুধ রহিয়াছে। ঐ সকল ভূপের নিৰ্ম্মােণ-কৌশল এতই মনোরম-এতই চিত্তাকর্ষক যে, অনেকে তৎসমুদায়কে-দেবশিল্পী বিরচিত বলিয়া মনে করিতেও কুষ্ঠাবোধ করেন না। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েন-সাং যখন ভারতভ্রমণে আগমন করেন, তখন তিনি মাত্র আশীটি ভূপ এবং বিহার দর্শন করিয়াছিলেন। তখন পাটলিপুত্র নগরের সে অশোকা